নারী-নিগ্রহে অভিযুক্ত সাংসদ, বিধায়কে এগিয়ে বাংলা

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) এবং ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ গত পাঁচ বছরের ৭৭৬ জন সাংসদের মধ্যে ৭৫৯ জনের এবং ৪১২০ জন বিধায়কের মধ্যে ৪০৬৩ জনের হলফনামার মামলা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

যে বাংলার ইতিহাসে ‘নব জাগরণ’-এর শিরোপা, সেই বাংলাই এ বার নারী নির্যাতন এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্ত সাংসদ-বিধায়কের সংখ্যায় দেশের মধ্যে সেরা! আর দল হিসাবে দেখলে এই ‘মুকুট’ বিজেপি-র মাথায়।

Advertisement

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিতে হয়, সেখানে তাঁদের জানাতে হয় নিজেদের বিরুদ্ধে থাকা মামলার তালিকা। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) এবং ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ গত পাঁচ বছরের ৭৭৬ জন সাংসদের মধ্যে ৭৫৯ জনের এবং ৪১২০ জন বিধায়কের মধ্যে ৪০৬৩ জনের হলফনামার মামলা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। তা থেকেই জানা গিয়েছে, দেশে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্ত সাংসদ-বিধায়কের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গেই সবচেয়ে বেশি— ১৬। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওড়িশা এবং মহারাষ্ট্র। তাদের এমন সাংসদ-বিধায়কের সংখ্যা ১২। গত পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গে ৬৯ জন নারী নিগ্রহে অভিযুক্ত ব্যক্তি ভোটে লড়েছেন।

ওই দুই সংস্থার সমীক্ষায় আরও জানা যাচ্ছে— দেশের ১৮ জন সাংসদ এবং ৫৮ জন বিধায়ক নির্বাচন কমিশনকে হলফনামায় জানিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে নারী-অপরাধের অভিযোগ আছে। এমন সাংসদ-বিধায়কের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দেশের শাসক দল বিজেপি-তে। সংখ্যাটি ২১। ১৬ জন এমন সাংসদ-বিধায়ক নিয়ে এ বিষয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কংগ্রেস। আর তৃতীয় ওয়াইএসআর কংগ্রেস। তাদের ওই অপরাধে অভিযুক্ত সাংসদ-বিধায়কের সংখ্যা ৭। গত পাঁচ বছরে দেশে লোকসভা, রাজ্যসভা এবং বিধানসভা ভোটে ৫৭২ জন এমন প্রার্থী ছিলেন, যাঁরা কোনও না কোনও স্তরের নারী নিগ্রহে অভিযুক্ত। তাৎপর্যপূর্ণ হল, তাঁদের এক জনেরও শাস্তি হয়নি। আর যে সব দলের নেতৃত্বে মহিলারা রয়েছেন, তারাও এমন অভিযুক্তদের প্রার্থী করেছে। যেমন— কংগ্রেস, বিএসপি এবং তৃণমূল।

Advertisement

রাজ্যের মন্ত্রী তথা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য বলেছেন, ‘‘মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, এমন কেউ তৃণমূলের বিধায়ক বা সাংসদ বলে আমার জানা নেই। এমন অভিযোগ করলে, নির্দিষ্ট ভাবে কারও নাম বলুক। আর আমাদের দলের নেত্রী মহিলাদের উপর অত্যাচারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন বলেই রাজ্যে মোট ৮৮টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মধ্যে ৪৫টিই মহিলাদের জন্য।’’

আর প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণা দেবনাথেরও বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেসে এমন অভিযুক্ত কেউ নেই। থাকলে দল নিশ্চয়ই আগামী দিনে তাঁকে ভোটে লড়তে দেবে না।’’ তবে এ রাজ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনায় তেমন কোনও শাস্তি হয় না বলেও তাঁর অভিযোগ।

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা। তা সত্ত্বেও এখানে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং দোষীদের শাস্তি— এই দুইয়ের হারই উদ্বেগজনক।’’ বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘অনেক সময় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও হয়। তবে কেউ মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত জেনেও তাঁকে ভোটে প্রার্থী করলে দলেরই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement