মাদ্রাসা মানে শুধু মুসলিম পড়ুয়া নয়। এ রাজ্যের অন্তত পাঁচটি মাদ্রাসায় অ-মুসলিম পড়ুয়ারাই সংখ্যায় বেশি।
মাদ্রাসা পর্ষদ সূত্রে খবর, বর্ধমানের ওড়গ্রাম চতুষ্পল্লি হাইমাদ্রাসা, হুগলির দাবরা হাইমাদ্রাসা, পুরুলিয়ার হুড়া মুজাফফর আহমেদ অ্যাকাডেমি হাইমাদ্রাসা, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ইসলামিয়া হাইমাদ্রাসা এবং উত্তর দিনাজপুরের কসবা এম এম হাইমাদ্রাসায় অমুসলিম পড়ুয়ারা সংখ্যাগুরু। ওড়গ্রামে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১২৩০। এর মধ্যে অ-মুসলিম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৮০০। দাবড়ায় ২৫৬ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অ-মুসলিম পড়ুয়ার সংখ্যা ১৫৭। পুরুলিয়ার হুড়ায় ১৩৬০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৭২০ জন অ-মুসলিম। চন্দ্রকোনায় ৩৮৩ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ২২৫ জন আর উত্তর দিনাজপুরের কসবায় ৫৯৫ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৩২০ জন পড়ুয়া অ-মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত।
ওড়গ্রাম হাইমাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত সায়ন বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাদ্রাসা মানেই কেবল মুসলিম পড়ুয়ারা পড়বে, সাধারণ মানুষের মনে এটা একটা ভুল ধারণা রয়েছে। ওড়গ্রাম চতুষ্পল্লি হাইমাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি গর্বিত। ওই মাদ্রাসার স্যারেদের জন্যই আমি এত দূর পৌঁছতে পেরেছি।’’ পুরুলিয়ার হুড়া মুজাফফর আহমেদ অ্যাকাডেমি হাইমাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্রী মিতালি মাহাতো বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নার্সিং-এ স্নাতক পড়ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘হুড়ার মাদ্রাসায় পড়াশোনার সময় কখনওই জাতপাতের কথা মনে হয়নি। আরবি পড়ে ক্লাসে ভালে নম্বরও পেয়েছি। বর্তমান সময়ে সাম্প্রদায়িকতা যখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তখন এমন মাদ্রাসা সম্প্রীতির মডেল হওয়া উচিত।’’ ঠিক একই কথা বললেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাদ্রাসা শিক্ষা সংগঠনের সভাপতি এ কে এম ফারহাদ-ও। তাঁর কথায়, ‘‘মাদ্রাসা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার বদল হওয়া দরকার। মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়নে এই পাঁচটি মাদ্রাসা সারা রাজ্যে মডেল হওয়া উচিত।’’
এ রাজ্যে বর্তমানে মাদ্রাসা পর্ষদ পরিচালিত ৬১৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে মাদ্রাসা পর্ষদের সিলেবাসে তফাৎ একটাই। মাদ্রাসা পর্ষদে বাড়তি বলতে ১০০ নম্বরের আরবি সাহিত্য। হুড়া মুজাফফর আহমেদ অ্যাকাডেমি হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আহমাদুল্লাহ আনসারি বলেন, ‘‘আমাদের মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র অনন্ত টুডু আরবিতে সর্বাধিক নম্বর পেয়ে বর্তমানে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি অনার্স নিয়ে পড়়াশোনা করছে।’’ পাঁচটি মাদ্রাসাতেই অ-মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা সংখ্যায় বেশি। মাদ্রাসা পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবিদ হোসেন বলেন, ‘‘পাঁচটি মাদ্রাসার এক কিলোমিটারের মধ্যেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত বিদ্যালয়ও রয়েছে। তা সত্ত্বেও অ-মুসলিম পড়ুয়ারা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে।’’
অর্থাৎ? মাদ্রাসা পর্ষদ সচিব রেজওয়ানুল করিম তরফদার বলেন, ‘‘সমাজের বড় অংশের মধ্যে আসলে মাদ্রাসা সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে। রাজ্যের পাঁচটি মাদ্রাসায় অ-মুসলিম ছাত্রদের সংখ্যাধিক্য সেই ভুলটাই ভেঙে দিল।’’