বিধানসভায় এনআরসি-বিরোধী প্রস্তাব পাশ করার দাবিতে বিক্ষোভ অসম ভবনের সামনে। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ
অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা থেকে ১৯ লক্ষ মানুষের বাদ পড়ার ঘটনার উত্তাপ এখন পুরোদস্তুর বঙ্গ রাজনীতিতেও। দেশের মানুষের রাষ্ট্রচ্যুত হওয়ার প্রতিবাদে দলকে পথে নামার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষত, উত্তরবঙ্গের দলীয় নেতাদের বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মিছিল হবে কলকাতাতেও। আবার একই বিষয়ে বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেসের আনা আলোচনার প্রস্তাব এখনও গৃহীত না হওয়ায় তরজা বেধেছে শাসক ও বিরোধী পক্ষের।
কালীঘাটে তাঁর বাড়িতে সোমবার দলের জেলা সভাপতি ও সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে মমতা উত্তরবঙ্গের নেতাদের বলেছেন, এনআরসি ঘিরে অনিশ্চয়তার কারণে অসম থেকে কিছু মানুষ এ রাজ্যে চলে আসতে পারেন। সেই সম্ভাবনা মনে করিয়ে দিয়ে উত্তরের জেলাগুলির তৃণমূল নেতৃত্বকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এনআরসি-র নামে নাগরিকদের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনার বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মীদের আগামী ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর রাজ্যের ব্লকে ব্লকে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ-সভা এবং মিছিল করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জেলার পরে ১২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় চিড়িয়া মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করবে তৃণমূল। দলীয় সূত্রের খবর, এই কর্মসূচির কথা জানাতে গিয়ে এ দিন বৈঠকে মমতা বলেছেন, এনআরসি থেকে অনেক গোর্খা, সেনাদের পরিবার এবং প্রাক্তন এক রাষ্ট্রপতির পরিবারের লোকজনও বাদ পড়েছেন। দেশের এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকলকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।
বিধানসভায় এ দিন জিরো আওয়ারে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী দাবি করেন, অন্যান্য কাজ সরিয়ে রেখে অবিলম্বে আলোচনা করে এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেওয়া হোক। উল্লেখ-পর্বে একই দাবি ছিল কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের। তৃণমূলের তরফে মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, এই রাজ্যে এনআরসি চালু করার দাবি কোনও ভাবেই মানা যায় না। ‘নাগরিকপঞ্জি বিরোধী যুক্ত মঞ্চের’ তরফে প্রসেনজিৎ বসু, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা এ দিনই কলকাতায় অসম ভবনের সামনে বিক্ষোভ-সভা করে সরকারি প্রতিনিধির মাধ্যমে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন, ওই রাজ্যে এনআরসি থেকে বাদ পড়া সব মানুষকে নাগরিকত্ব দিতে হবে। এ রাজ্যের বিধানসভাতেও এনআরসি-বিরোধী প্রস্তাব পাশ করতে হবে।
শাসক দল এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামলেও বিধানসভায় বিরোধীদের দেওয়া প্রস্তাব মেনে আলোচনায় অনীহা কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে বাম ও কংগ্রেস। বিধানসভার মিডিয়া সেন্টারে এ দিন সুজনবাবু বলেন, ‘‘বাম ও কংগ্রেসের তরফে ১৮৫ ধারায় প্রস্তাব আগেই জমা দেওয়া আছে। বিধানসভায় আজও তেমন কিছু কার্যসূচি ছিল না। তবু আলোচনা হচ্ছে না কেন?’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এটা শুধু মুসলিম বা বাঙালদের বাদ পড়ার প্রশ্ন নয়। যা হচ্ছে, তা মানবতা এবং নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ। বিধানসভায় অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চাই।’’ এখন এনআরসি-প্রশ্নে বিজেপির সমালোচনা করলেও অতীতে সংসদে তৃণমূল নেত্রী যে তাদের সুরেই ‘অনুপ্রবেশকারী’ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন, তা-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সুজনবাবু।