ফাইল চিত্র।
এত দিন বিবেকানন্দ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নম্বরের নিয়ম চালু ছিল। এখন থেকে ৬০ শতাংশ নম্বর থাকলেই ওই বৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি জানান, রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কী পড়ানো হচ্ছে, কোথায় কতটা কী সুযোগ আছে— সব তথ্য হাতের মুঠোয় পেতে ‘কেরিয়ার গাইডেন্স’ নামে একটি পোর্টাল চালু করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রান্স, আলিম, ফাজিল এবং হাইমাদ্রাসার কৃতী ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন সংবর্ধনা সভায় এ কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজ্যে এখন উচ্চশিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি। ৪২টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমতালিকায় এক এবং দুই নম্বরে। এই রাজ্যে পড়াশোনা করে বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোথায় কী হচ্ছে, তা জানতেই চালু হচ্ছে নতুন পোর্টাল।” দ্রুত ওই পোর্টাল তৈরি করে ছাত্রছাত্রীদের নিখরচায় তার সুবিধা দেওয়ার জন্য শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
একই সঙ্গে মমতা এ দিন জানান, এ বার থেকে প্রতি বছর ৫০০ জন কলেজপড়ুয়াকে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের (সিএমও) অধীনে ইন্টার্নশিপের ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে। গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করলে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াদের অভিজ্ঞতা বাড়বে। ইন্টার্নশিপের মেয়াদ শেষ হলে প্রত্যেককে অভিজ্ঞতার শংসাপত্রও দেবে রাজ্য সরকার।
এ দিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যের ১৭০০ জন কৃতী ছাত্রছাত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অন্যান্য বার সিআইএসসিই এবং সিবিএসই বোর্ডের দশম ও দ্বাদশের রাজ্যের কৃতী পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দেওয়া হলেও তাঁরা এ বার অনুপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁদেরও সংবর্ধনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে এ বার তাঁদের কোনও র্যাঙ্ক হয়নি বলে ওই দুই বোর্ডের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
অন্য বার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কৃতীদের সংবর্ধনা দেওয়া হলেও করোনার জন্য দু’বছর ধরে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে অনলাইনে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নবান্ন থেকেই প্রতিটি জেলার কৃতী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে পৃথক ভাবে বক্তব্য পেশ করেন। বিভিন্ন জেলায় ডিএম অফিসে বসে মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনেন ছাত্রছাত্রীরা। কলকাতায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ডিরোজিও ভবনে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শোনার আয়োজন করা হয়। কেরিয়ার গড়তে নানা টিপসও দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, ডাক্তারির চাহিদা খুব। তার মধ্যে আবার সব থেকে বেশি চাহিদা নিউরোলজিস্টের। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “রাজ্যে নিউরোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কম। আইনের পেশার চাহিদাও ভাল। আইএএস, আইপিএস বা ডব্লিউবিসিএস অফিসার হতে গেলে রাজ্যের ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের মনে করিয়ে দেন, পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের সামাজিক কাজও করতে হবে। কোনও ‘নেগেটিভ’ বা নেতিবাচক চিন্তা করা চলবে না। “নেটেগিভ চিন্তায় মাথার সেল নষ্ট হয়ে যায়। রেগে গেলেও সেল নষ্ট হয়। কখনও অতিরিক্ত স্ট্রেস নেবে না। কখনও রাগবে না। মন ভাল করার জন্য গান শুনবে, হাঁটবে,” পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর। সেই সঙ্গে আগামী প্রজন্মের উদ্দেশে মমতার বার্তা, “বাইরে পড়তে গেলেও কাজ করার জন্য তোমরা দেশেই ফিরে এসো। দেশে তোমাদের মতো কৃতী ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ প্রয়োজন।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে সব কৃতী পড়ুয়াকে ল্যাপটপ, ট্রে, পদক, ব্যাগ, কফিমগ, পেন, ডায়েরি, হাতঘড়ি, ৪০টি বই এবং শংসাপত্র দেওয়া হয়।