নির্বিঘ্নে বিধানসভা ভোট করিয়ে আমজনতার তারিফ কুড়িয়েছিলেন দু’জনেই। ভোটের ফল বেরনোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরতে হয়েছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্রকে। এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজীব কুমার। তার ১৬ দিনের মাথায় সরিয়ে দেওয়া হল বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিমকে। নতুন কমিশনার হচ্ছেন জ্ঞানবন্ত সিংহ। জাভেদকে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের আর্থিক অপরাধ দমন শাখার অধিকর্তার দায়িত্ব। সম্প্রতি পদটি তৈরি হয়েছে।
সোমবার ২২ জন পুলিশ অফিসারকে বদলির তালিকা প্রকাশ করেছে নবান্ন। ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে এ নিয়ে প্রায় ৫০ জন আইপিএস বদলি হলেন।
ভোট চলাকালীন বেশ কিছু আমলা-পুলিশ অফিসারকে বদলি করেছিল নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতায় আসার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন এঁদের সকলকে পুরনো পদে না-ফেরানো পর্যন্ত শপথ নেবেন না তিনি। সেই কাজ হয়ে গিয়েছে। নবান্ন সূত্র বলছে, এ বার শুরু হয়েছে কমিশনের নির্দেশ মেনে ভোট করানো অন্য অফিসারদের সরানোর পালা। ওই সূত্রটি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভোটপর্বে মমতা বলেছিলেন, কোন অফিসার কে কী করছেন, তা নজরে রাখছেন তিনি। সূত্রটির মতে, তার পর এই বদলি অবশ্যম্ভাবী ছিল।
কিন্তু পুলিশ মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, কমিশনের নির্দেশ মেনে, শিরদাঁড়া সোজা রেখে ভোট করিয়ে ওই অফিসারেরা কি অপরাধ করেছেন? তা ছাড়া, তাঁদের কাজের জন্য জনমত যে শাসক দলের বিরুদ্ধে গিয়েছে এমন তো নয়। কলকাতা ও বিধাননগরে তারা সব ক’টি আসন জিতেছে। ফলে শাসক দল এখন জোর গলার বলতে পারছে যে, সাচ্চা ভোটে জিতেই তারা ফের ক্ষমতায়। তা হলে এই বদলি কেন!
ক’দিন আগেই কমিশনের প্রশংসা পাওয়া কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান দুই কর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিন প্রকাশিত তালিকায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি (বিশেষ) দেবস্মিতা দাসকে ডিসি (ইএসডি) করা হয়েছে।
এ দিনের বদলিকে কটাক্ষ করে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র টুইট করেছেন, ‘‘কমিশনের বাহবা কুড়নো পুলিশ অফিসারদের এমন পদে পাঠানো হচ্ছে, যেখানে কোনও কাজ নেই। আর লেঠেলবাহিনী পুরস্কার পাচ্ছে। এটাই তৃণমূলের সুশাসন!’’ এই বদলি এবং সন্ত্রাসের প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর কাছে সময় চেয়েছেন কংগ্রেস বিধায়কেরা।
এ দিনের নির্দেশে ডিআইজি রেঞ্জের এক্তিয়ারেরও রদবদল করা হয়েছে। যেমন, ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের) অধীনে থাকা উত্তর ২৪ পরগনার দায়িত্ব ব্যারাকপুরের নতুন সিপি-কে দেওয়া হয়েছে। ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ)-কে হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সঙ্গে হুগলি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হুগলি এত দিন ছিল ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জে)-এর অধীন।