রক্সি কি বেদখল, দেখবে কমিটি

পুরসভার সম্পত্তি ‘রক্সি’ ভবনটি বেআইনি দখলদারের হাতে চলে যাচ্ছে কি না খতিয়ে দেখতে বিশেষ কমিটি গড়ল কলকাতা পুর প্রশাসন। আগামী সপ্তাহে কমিটির প্রথম বৈঠক বসছে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২২
Share:

পুরসভার সম্পত্তি ‘রক্সি’ ভবনটি বেআইনি দখলদারের হাতে চলে যাচ্ছে কি না খতিয়ে দেখতে বিশেষ কমিটি গড়ল কলকাতা পুর প্রশাসন। আগামী সপ্তাহে কমিটির প্রথম বৈঠক বসছে।

Advertisement

কলকাতা পুরসভার মালিকানায় থাকা রক্সি বিল্ডিংয়ের ১১ হাজার বর্গফুট জায়গা একটি সংস্থাকে কম ভাড়ায় লিজ দেওয়া নিয়ে আগেই আপত্তি উঠেছে অন্দরমহল থেকে। গত জুলাইয়ে রক্সি সংক্রান্ত ফাইল চেয়ে পাঠায় কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (ক্যাগ) অফিস। চার মাস পরে ক্যাগের রেসিডেন্ট অডিট শাখাকে পুরসভা জানিয়ে দেয়, তাদের কাছে ফাইল নেই। এই অবস্থায় পুরসভার বিশেষ কমিটি দেখতে চায়, লিজ-মুক্ত হওয়ার পরেও রক্সি বিল্ডিং কারও দখলে চলে যাচ্ছে কি না বা কেউ ভাড়াটে না হলেও ওই বিল্ডিং ‘অন্য ভাবে’ করায়ত্ত করার চেষ্টা হচ্ছে কি না। এবং এমন হয়ে থাকলে পুর প্রশাসনের কেউ তাতে যুক্ত আছেন কি না— তাও দেখবে কমিটি।

রক্সিকে নিয়ে বিতর্কটা কী? এসএন ব্যানার্জি রোজে পুরভবনের পাশেই ৪এ এবং ৪বি বাড়ি দু’টি রক্সি বিল্ডিং নামে পরিচিত। নথি অনুসারে, পুরসভার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মেসার্স বেঙ্গল প্রপার্টিজ লিমিটেড নামে একটি সংস্থা ৯৯ বছরের জন্য ওই বিল্ডিংয়ের লিজহোল্ডার ছিল। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৭-০৮ আর্থিক বছরে। ফের লিজ নিতে চাইলে বেঙ্গল প্রপার্টিজকে ৭১ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলে পুরসভা। সংস্থাটি তাতে নারাজ হলে সম্পত্তির দখল নিয়ে মামলা শুরু হয়। গত বছর অগস্টে হাইকোর্ট রায় দেয়, পুরো টাকা দিয়ে ওই সংস্থা আবার লিজ নিতে পারে। তা না হলে ওই সম্পত্তির দখল নিক পুরসভা।

Advertisement

আদালতের রায়ে রক্সি বিল্ডিং বেঙ্গল প্রপার্টিজের হাতছাড়া হতেই শুভলাভ ডিলার প্রাইভেট লিমিটেড নামে এক সংস্থার সঙ্গে লিজ চুক্তি করতে আগ্রহ দেখায় পুরবোর্ড। এই সংস্থার রেজিস্টার্ড ঠিকানা, ১৩৯ডি/৩ মহারাণী ইন্দিরাদেবী রোড, পর্ণশ্রী, বেহালা। শুভলাভ ডিলার প্রাইভেট লিমিটেডের দুই ডিরেক্টরের এক জন মেয়রের আত্মীয় এবং অন্য জনও তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সেই সুবাদেই কম টাকায় তাঁদের লিজ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। ফলে লিজ-চুক্তি সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও পুর অফিসারদের আপত্তিতে তা ভেস্তে যায়। সম্প্রতি মেয়রের ঘনিষ্ঠ দুই ডিরেক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট।

কিন্তু রক্সি বিল্ডিংয়ের মত দামী সম্পত্তি বেশি দিন ফেলে রাখা মানে পুরসভার বিপুল ক্ষতি। পুরসভার এক কর্তা জানান, শুভলাভের সঙ্গে চুক্তির যে খসড়া হয়েছিল তা চূড়ান্ত হলে বিল্ডিংয়ের একটা বড় অংশ লিজ পুরসভা পেত প্রতি বর্গফুটে মাসে ৪ টাকা! বিনিময়ে ওই অংশ সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে ভাড়া দিয়ে শুভলাভের পকেটে ঢুকত প্রতি বর্গফুটে মাসে ১০৫ টাকা। অর্থাৎ, ১০ হাজার বর্গফুটের জন্য লিজগ্রহীতার আয় হত মাসে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা। পুরসভার জুটত মাত্র ৪০ হাজার টাকা। অফিসারেরা এতেই আপত্তি তোলেন। এখন কমিটি কী করে, সেটাই দেখার। কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন পার্ক ও উদ্যান দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। রয়েছেন আরও দুই মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার ও আমিরুদ্দিন ববি। ১৪ জনের কমিটিতে মেয়রের ওএসডি-ও (অম্লান লাহিড়ী) থাকায় অনেকে বিস্মিত!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement