সারদা কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রয়োজনে তাঁদের গ্রেফতারের দাবিতে শিলিগুড়িতে মহামিছিলের ডাক দিল বামফ্রন্ট।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৩টেয় মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড় থেকে ওই মিছিল শুরু হবে। শেষ হবে শিলিগুড়ি পুরসভার সামনে। ওই মিছিল থেকে এসজেডিএ কাণ্ডে শহরের বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং রামঘাটের ঘটনায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবে’রও গ্রেফতারের দাবি জানাবে বামেরা। জানিয়েছেন দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে অশোকবাবু বলেন, “রাজ্যে যা চলছে তাতে প্রতিবাদের ভাষা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই সব হচ্ছে। সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেত্রী-সহ অন্যান্যদের জেরা করা দরকার। প্রয়োজনে গ্রেফতার করতে হবে। সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করা হয়েছে। এই দাবিতে আমরা রাস্তায় নামছি। মহামিছিল হবে।”
তিনি বলেন, “সারদার পাশাপাশি শিলিগুড়ির এসজেডিএ-তে দু’শো কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এরও সিবিআই তদন্তের দাবি করেছি আমরা। মিছিল থেকে সংস্থার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বিধায়কের গ্রেফতারের দাবিও তুলব। আর রামঘাটের ঘটনায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর গ্রেফতার চাই। ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নামলে ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ককে পুলিশ হেনস্থা করেছে। আমরা শিলিগুড়ি থানার আইসি, পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ির ওসি’কে বরখাস্তের দাবি তুলছি।” জেলাশাসককে স্মারকলিপিও দেওয়া হবে বলে জানান দার্জিলিং জেলা সিপিএমের কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই তৃণমূল নেতারাই ভয় পাচ্ছেন বলে শিলিগুড়ি পুরভোট, মহকুমা পুরিষদের ভোট নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না বলে অশোকবাবু এদিন অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “বাঘাযতীন পার্কের সভায় মুখ্যমন্ত্রী যা ইঙ্গিত দিয়েছেন তাতে নতুন বছরের গোড়ায় দুটি ভোট হবে না বলেই মনে হচ্ছে। আসলে উনি সবাইকে ‘শূন্য’ করে দেওয়ার কথা সভায় বললেও নিজেই শূন্য হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। প্রশাসক বোর্ডের ছয়মাসের মেয়াদ। আমরা কেন, শহরের মানুষও দেখবে, ওঁরা কী করেন।”
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, “জনবিচ্ছিন্ন দল এবং তাঁর লোকেদের বক্তব্য, আন্দোলন নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না।”
বামফ্রন্টের কর্মসূচি ছাড়াও এসইউসিআই, সিপিআই (এমএল)-র মত দলগুলি নিয়েও এদিন আন্দোলনের কথা বলেছেন সিপিএমের নেতারা। অশোকবাবু জানান, রাজ্যব্যাপী বামপন্থী দলগুলি একসঙ্গে নানা বিষয়ে লড়ছে। আগামী ৬ ডিসেম্বর নকশাল, এসইউসিআই-র মত বামপন্থী দলগুলিকে নিয়ে বিধান রোডের গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাশে সকাল ১১টা থেকে অবস্থান বিক্ষোভ হবে। আর ৬ জানুয়ারি বাঘাযতীন পার্ক থেকে বিকাল ৩টা থেকে সন্ত্রাস বিরোধী মিছিলও হবে। তার আগে ২৩ ডিসেম্বর বামপন্থী, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে নাগরিক কনভেনশন করা হচ্ছে।
আগামী ৬ এবং ৭ ডিসেম্বর শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়িতে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্মেলন হতে চলেছে। দলের তরফে জানানো হয়েছে, মহকুমা পরিষদের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নকশালবাড়ি গার্লস স্কুলে দুইদিন সম্মেলন হবে। প্রথমদিন সম্মেলনের আগে স্থানীয় আদিবাসী ময়দানে জনসভা হবে। তাতে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সাংসদ মহম্মদ সেলিম উপস্থিত থাকবেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আসতে পারছেন না। আর কলকাতায় সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল থাকায় রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও আসছেন না।
অশোকবাবু জানান, শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও আন্দোলন শুরু হয়েছে। ১০০ দিনের মজুরি বকেয়া পড়ে গিয়েছে। সামজিক প্রকল্পগুলির ভাতা মানুষ পাচ্ছেন না। জেলা সম্মেলন থেকে আন্দোলন জোরদার করব। আর জীবেশবাবু’র বক্তব্য, “গ্রামের মানুষ সম্মেলনকে সফল করার জন্য নিজেরাই টাকা, ধান, চাল এবং সব্জি দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।”