হাসপাতালে দিন কাটান অশীতিপর ভারতী দেবী

চোখের দৃষ্টি তাঁর ক্ষীণ হয়ে এসেছে। কানের কাছে গিয়ে জোরে কথা না বললে শুনতে পান না কিছুই। বয়স কত হবে? কোনও রেকর্ড নেই। সকলেই বলেন, আশির কম নয়। সাত মাস আগের এক রাতে তিন যুবক ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে হাজির হন হাসপাতালে। ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি। পরে কেউ খোঁজ নিতে যাননি হাসপাতালে। তিনিও আর হাসপাতাল ছেড়ে যাননি কোথাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০০:৫৩
Share:

ভারতী গোস্বামী।—নিজস্ব চিত্র।

চোখের দৃষ্টি তাঁর ক্ষীণ হয়ে এসেছে। কানের কাছে গিয়ে জোরে কথা না বললে শুনতে পান না কিছুই। বয়স কত হবে? কোনও রেকর্ড নেই। সকলেই বলেন, আশির কম নয়। সাত মাস আগের এক রাতে তিন যুবক ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে হাজির হন হাসপাতালে। ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি। পরে কেউ খোঁজ নিতে যাননি হাসপাতালে। তিনিও আর হাসপাতাল ছেড়ে যাননি কোথাও। এখন কোচবিহার মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ (জেলা) হাসপাতালই যেন তাঁর বাড়ি।

Advertisement

তাঁর নাম ভারতী গোস্বামী। ঠিকানা দিনহাটার মদনমোহন পাড়া। নিজের পরিচয় এমনটাই জানিয়েছেন বৃদ্ধা। যদিও একাধিক বার খোঁজ চালিয়ে মদনমোহন পাড়া এলাকায় কোনও আত্মীয়-পরিচিতের খোঁজ মেলেনি। বৃদ্ধার দাবি, তাঁর বাড়ি ওই এলাকাতেই। তাঁর স্বামীর নাম যোগেশচন্দ্র গোস্বামী। বছর সাতেক আগে স্বামীর মৃত্যু হয়। ছেলেমেয়ে নেই। পরিবারে অন্যরা তাঁর খোঁজ রাখেন না বলে অভিমানও রয়েছে ভারতী দেবীর।

হাসপাতালের কর্মীরা জানান, মাস সাতেক আগে এক রাতে তিন যুবক গুরুতর অসুস্থ ভারতী গোস্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করান। প্রথমে তাঁকে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিছু দিনের মধ্যে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেও, কেউ তাঁর খোঁজ নিতে আসেননি। কারা তাঁকে ভর্তি করিয়েছেন, তাঁদেরও নাম নথিবদ্ধ না করায় কোনও খোঁজ মেলেনি। প্রথমে কিছু দিন হাসপাতালের ওয়ার্ডে একটি বিছানায় থাকতেন তিনি। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তিনি ওয়ার্ডের করিডরে নিজের মতো বন্দোবস্ত করে নেন। হাসপাতালের একটি শয্যা দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কর্মীরা কেউ তাঁকে কাপড়, মশারি দিয়েছেন। হাসপাতাল থেকেই প্রতিদিনের খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। হাসপাতালের কর্মীরা প্রতি দিন খোঁজ নেন, এমনকী চিকিৎসকরাও মাঝেমধ্যে তাঁকে পরীক্ষা করে যান বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, “উনি আমাদের আত্মীয়ের মতো হয়ে গিয়েছেন। তিনি যাতে ভাল থাকেন সেই চেষ্টা করি। তবু তাঁর কষ্ট অভিমান দেখে খারাপ লাগে। যাঁরা তাঁকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন তাঁদের ক্ষমা করা যায় না।”

Advertisement

জেলা হাসপাতাল সুপার জয়দেব বর্মন বলেন, “পুলিশ মারফত ওই বৃদ্ধার আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাউকেই পাওয়া যায়নি। কেউ তাঁকে নিতে আসেননি। তাঁকে তো এই বয়সে বের করে দেওয়া যায় না। তাই করিডরে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। কোনও বৃদ্ধাবাস যদি তাঁকে রাখতে আগ্রহী হয়, তবে ভালই হয়।” আর যাকে ঘিরে এত কাণ্ড সেই ভারতী দেবীর শরীর বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেই কষ্ট অনুভব করেন তিনি। কথাবার্তাও এখন কিছুটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “এ ভাবে আর কত দিন বাঁচব কে জানে। নিজের বাড়িতে ফিরতে খুব ইচ্ছে করে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement