এই মঞ্চই খুলে ফেলা হচ্ছে।
সরকারি দফতরের অন্দরে সমন্বয়ের অভাবে শিলিগুড়িতে একটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ বানিয়েও তা ভেঙে ফেলতে হচ্ছে আবাসন দফতরকে।
কারণ, আগামী ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা ছিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ও আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের। কিন্তু, সে দিনই বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলিগুড়ি হয়ে কালিম্পং যাবেন। এখন ঠিক হয়েছে, ওই সরকারি আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করানো হবে মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েই। যে হেতু, ভক্তিনগর থানা লাগোয়া হিমালয় কন্যা আবাসনের যেখানে মঞ্চ হয়েছে সেই এলাকায় যাতায়াতের রাস্তা সঙ্কীর্ণ। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিভাগ আপত্তি জানিয়েছে। তাই রাতারাতি মঞ্চ ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। ওই অনুষ্ঠান হবে অন্য কোনও জায়গায়। ফলে, অর্থ ও সময় দুই-এর অপচয়ের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলের নেতাদের অনেকেই।
যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে আসছেন। একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস করবেন। তিনি যখন আসছেন, তখন তাঁকে দিয়ে আবাসন প্রকল্পটির উদ্বোধন করানোর সুযোগ হাতছাড়া করব কেন? এতে গোটা বিষয়টিই ভিন্ন মাত্রা পায়। অর্থ, সময় অপচয়ের প্রশ্ন তুলে ছিদ্রান্বেষণের চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক। বরং এত ঘনঘন মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে আসেন বলেই যে কত প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণ হচ্ছে সেটা মাথায় রাখুন বিরোধীরা।”
সার্কাস ময়দান পরিদর্শনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব।
অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারদের একাংশ একান্তে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু সমন্বয় না-থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে আবাসন দফতরের অফিসাররা অপচয়ের প্রসঙ্গ মানতে নারাজ। আবাসন দফতর দাবি করেছে, সব মিলিয়ে মঞ্চ ও অনুষ্ঠানের সামগ্রী দেওয়ার জন্য আড়াই লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল একটি সংস্থার সঙ্গে। সেই মতো প্রস্তুতিও চলছিল। কিন্তু, মঞ্চ পুরো নির্মাণের আগেই মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের বিষয়টি জানতে পেরে তা ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে কয়েকজন অফিসার জানান। ওই অফিসারদের মতে, আবাসন দফতরের নানা অনুষ্ঠান হয়েই থাকে। ফলে, আগামী দিনে ডেকরেটর সংস্থাকে দিয়ে অন্য কোনও কাজ করিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ওই মঞ্চ ভাঙা হলেও আগামী ১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কোথায় হবে তা অবশ্য বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। এদিন সকালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারদের নিয়ে দুটি ময়দান দেখেন। একটি হল, শিলিগুড়ির সেবক রোডের সার্কাস ময়দান। যেখানে প্রচুর জলকাদা হয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় হল উত্তরবঙ্গের আইজি অফিস লাগোয়া ইন্দিরা ময়দান। যে ময়দানটি অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থায় রয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টারা সব কিছু খতিয়ে দেখার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী সোমবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাগডোগরা পৌঁছনোর কথা। সে দিনই বিকেলে শিলিগুড়ির অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে হিমালয় কন্যা আবাসনের চতুর্থ দফার উদ্বোধন করবেন। সেখান থেকেই সংস্কারের পরে নতুন সাজে সেজে ওঠা দীনবন্ধু মঞ্চের উদ্বোধনও করার কথা তাঁর। এ ছাড়াও সাইকেল বিলি সহ একাধিক কর্মসূচিও রয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা রাতে জানান, সার্কাস ময়দানে যাতায়াত ও পার্কিংয়ের অনেক সুবিধে রয়েছে। সব ঠিক থাকলে সেখানেই ওই অনুষ্ঠান হতে পারে বলে ওই কর্তা জানিয়েছেন।
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।