ছবিতে নারী
শহর জলপাইগুড়ির শিল্পী শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়ের একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি একাদেমি অফ ফাইন আর্টসের ওয়েস্ট গ্যালারিতে। শিরোনাম ‘অা কাপেলা’। শিল্পীর ২২টি ছবিতে উঠে এসেছে নারী সত্ত্বা, নারীর অস্তিত্ব ও জনজীবনের সঙ্গে তার একাত্মতা। ধরা পড়েছে সমকালীন সময়ের দোলাচলও। ছবিগুলির মাধ্যম অ্যাক্রিলিক অন পেপার, ডিজিটাল পেন্টিং এবং অ্যাক্রিলিক অন ক্যানভাস। ‘টাচ’ সিরিজে কাগজের ওপর মিশ্র মাধ্যমের টার্কুইস ব্লুতে করা পাঁচটি ছবি—জল, আকাশ, অগ্নি, পৃথিবী, বায়ু পঞ্চভূতের কথা বলে। ‘অা রে অফ মুন’ কাজটিতে জনজীবনের মুহূর্ত উঠে এসেছে এক বালকের হাতে ধরে থাকা হলুদ বেলুনের পরিসরের মধ্য দিয়ে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাচিক শিল্পী ঊর্মিমালা বসু এবং চিত্রশিল্পী ইলিনা বণিক।
স্মারক বক্তৃতা
মনীষী পঞ্চানন বর্মার সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হল আন্তর্জাতিক আলোচনাসভা। আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজেস অ্যান্ড কালচার এবং পঞ্চানন বর্মা স্মারক সমিতি, শিলিগুড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অজয় রায় আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও জনজাতি বা জনগোষ্ঠী নয়, মানুষের সার্বিক মুক্তি বা উন্নয়নই কাম্য।’’ স্মারক সমিতির সম্পাদক চিত্তরঞ্জন বর্মনের মতে, মনীষী পঞ্চানন বর্মার সঠিক মূল্যায়ন আজও হয়নি। এ বিষয়ে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে। ড. আনন্দগোপাল ঘোষ প্রসঙ্গক্রমে বলেন, ‘‘ক্ষত্রিয় সমিতি পাকিস্তানকে সমর্থন করে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত যদি না নিত তবে পশ্চিমবঙ্গের আয়তন বাড়ত। উত্তরবঙ্গে রাজবংশীদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি বৃদ্ধি হত, পাশাপাশি নির্বাচনী রাজনীতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত।’’ সেন্টারের অধিকর্তা অধ্যাপক নিখিলেশ রায় জানান, ‘‘প্রতি বছর তাঁর জন্মদিনে আমরা স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে থাকি। এ বছর সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে এই আন্তর্জাতিক আলোচনার মাধ্যমে তাঁর জীবন ও কর্মের পরিধি আন্তর্জাতিক স্তরেও বিস্তৃতি লাভ করবে।’’ সান্ধ্য অনুষ্ঠানে ভাওয়াইয়া পরিবেশন করেন অমর সিংহ এবং অধ্যাপক জয়ন্ত বর্মন। কবিতা পাঠ করেন রিজিয়া পারভিন। ছিল বাংলা বিভাগের ছাত্রীদের নৃত্যানুষ্ঠানও।
বোতল গামলাই তালবাদ্য
সম্প্রতি মালদহের দুর্গাকিংকর সদনে গীত ও তালবাদ্যের এক ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠান উপহার দিল অঙ্কুরোদ্গম কালচারাল সোসাইটি ও নূপুর স্কুল অফ মিউজিক। ‘আমরা সবাই রাজা’ কবিতার আঙ্গিকে পরিবেশিত গানের সঙ্গে পরিচিত যন্ত্রানুষঙ্গের বাইরে বাজে হামান দিস্তা, অ্যালকোহলের বোতল, বড় গামলা, জলের বড় জার, অ্যাটাচি, পরাত। বহু বাদ্যের সমাহারে এই সুর তালের মনোরম পরিবেশনা শ্রুতিসুখ রচনা করে যা মনে রাখার মতো। ‘চারবাগে’ কাহন (তালবাদ্য), পাখোয়াজ, তবলা ও বাংলা ঢোলের ফিউশনে সৃজন সরকার, যশোদীপ্ত সেনগুপ্ত, সুদীপ্ত রায় ও প্রলয় রায়ের পরিবেশনায় ছিল চর্চিত বোধের পরিচয়। নূপুর ধর, সুমিতা চক্রবর্তী, সুমন সরকার, সুব্রত রায় ও প্রান্তিকের সমবেত নিবেদনে রাগ ভৈরবের সঙ্গে ছিল তন্ময় বিশ্বাসের লোকসঙ্গীতের মিশেল। সম্মেলক সঙ্গীতে শোনা গেল ‘আয় তুফান’ এবং ‘হাটট্টি মা টিম’। গান শোনান সীতারাম সিংহ। পারকাসনে সঙ্গ দেন মৃন্ময় চক্রবর্তী ও স্বজন সরকার, হারমোনিয়ামে সীতারাম সিংহ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় ছিলেন মনগোপাল ধর ও নূপুর ধর।
নাটক থেকে গানে বিজয়া সম্মিলনী
প্রতি বছরের মতো এ বারও বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল বালুরঘাটের দিশারী ক্লাব অ্যান্ড লাইব্রেরি। শুরুতে ছড়া শোনালো অনুভব চৌধুরী, সৃজিত সাহা, শ্রেয়া পালের মতো কচিকাঁচারা। মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘বাহুবলী’ (নির্দেশনা তুহিন শুভ্রমণ্ডল)। সঠিক শিক্ষা পেলে বিপথগামী মানুষেরা যে ঠিক পথে চালিত হতে পারে, সে কথাই বলা হল এই নাটকে। রাজ সরকার (মাস্টারমশাই), স্বপ্নদীপ সাহা (ছাত্র) ও সায়ন সাহা-র অভিনয় যথাযথ। বিজয়া সম্মিলনীর পরম্পরা নিয়ে বলেন পূর্তমন্ত্রী শংকর চক্রবর্তী। বালুরঘাট ব্লকের বিডিও শুভ্রজিৎ গুপ্তের কণ্ঠে আবৃত্তি আসর উপরি পাওনা। পাশাপাশি বালুরঘাটের বর্ণালী মঞ্চ ও তুহিনশুভ্র মণ্ডল ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে নাট্যতীর্থ মন্মথ মঞ্চে বসেছিল বিজয়া সম্মিলনীর আসর। স্বরচিত নাটক ‘কৈলাস এক্সপ্রেস’ পাঠ করেন হারান মজুমদার। শুভ দাশগুপ্তের ‘যদিও’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন দোয়েল চক্রবর্তী এবং ‘দুই বিঘা জমি’ পাঠ করে শোনান প্রবাসী সত্যজিৎ রায়। স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শোনান কবি বিশ্বনাথ লাহা এবং তাঁরই রচিত কবিতা গান গেয়ে শোনান বিপ্লব সাহা। তুহিন শুভ্র মণ্ডল, সুচেতনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমেন সমাদ্দারের সমবেত পরিবেশনা শঙ্খ ঘোষের ‘মেঘ’ কবিতাটির আবৃত্তি। আগমনি গানের সঙ্গে তিলানা সিংহ রায়ের নৃত্যানুষ্ঠানটি ছিল উপভোগ্য।
লেখা ও ছবি: অনিতা দত্ত
সাহিত্য অঙ্গন
সাহিত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল শিলিগুড়ির ‘সাহিত্য অঙ্গন’। স্থানীয় উদয়ন মেমোরিয়াল স্পোর্টস লাইব্রেরিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডঃ প্রকাশ অধিকারী। সংস্থার সাহিত্য সংকলন ‘জলপিপি’ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করলেন তিনি। প্রধান অতিথি অধ্যাপক সমর চক্রবর্তী প্রকাশ করলেন নুরুল হাসানের কাব্যগ্রন্থ ‘চিকাস’। এ দিন ‘জলপিপি শারদ সম্মান’-এ সম্মানিত করা হল ডঃ প্রকাশ আধিকারীকে। সুদীপ চৌধুরী এবং মহুয়া দত্তের সঞ্চালনায় সংস্থার সদস্যদের সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং কবিতা পাঠ মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন অমিত চৌহান, বিবেক কবিরাজ এবং নুরুল হাসান। লেখা ও ছবি: সুদীপ দত্ত।
স্মরণসভা
প্রাণতোষ কুমার মৈত্রর স্মরণসভা আয়োজিত হল মালদহের মৈত্র ভবনে। কচিকাঁচারা গান, নাচ ও কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন স্থানীয় কবিরা। রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন শহিদ দাস, অনিল বর্মন, বনানী সাহা এবং ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী। স্মরণসন্ধ্যার পূর্ণতা প্রাপ্তি হল লেখকের সহধর্মিণী নিয়তি মৈত্র, আশুতোষ বর্মন, দীপক সাহা, দেবজ্যোতি সাহার স্মৃতিচারণে।