কাঁটাতারের বেড়া নেই। অভিযোগ, বিএসএফের কড়া নজরদারি ঠিকঠাক নেই। সন্ধ্যা নামলেই যেন গোটা এলাকা চলে যায় দুষ্কৃতীদের দখলে। অবাধে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা যাওয়া-আসা যাওয়া করে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই পথ ধরেই চলে চোরা কারবার। চলে মানুষ পারাপারও। কোচবিহারের দিনহাটার বাংলাদেশ সীমান্ত গীতালদহের ওই এলাকা নিয়ে এমনই অভিযোগ সাধারণ মানুষের। গত শনিবার গীতালদহের বাঁধেরকুঠিতে নজরুল হক (৩০) নামে এক যুবককে খুন করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ-বিএসএফ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ-- সকলের সন্দেহ, বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকে নজরুলকে খুন করেছে। ঘটনার পিছনে লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে খুব বেশি হলে ৫০০ মিটার দূরে ওই যুবকের দেহ পড়ে ছিল। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। খুনের পিছনে কারা রয়েছে, তা দ্রুত প্রকাশ্যে আসবে বলে আশা করছি।” বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, “ওই এলাকায় কাটাতারের বেড়া না থাকার সুযোগ নিয়ে চোরাকারবারীরা সক্রিয়। ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
দিনহাটার গীতালদহ সীমান্ত দিয়ে চোরা কারবারের অভিযোগ নতুন নয়। গরু থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস-- প্রায় প্রতিদিন ওই সীমান্ত দিয়ে পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাংলাদেশ থেকে কাপড় থেকে শুরু নানা ধরণের সামগ্রী ওই পথেই এপাশে আসছে। ওই কারবারকে কেন্দ্র করে দুই দেশের দুষ্কৃতীরা সক্রিয় রয়েছে বলে পুলিশের অভিযোগ। ওই এলাকায় মাস কয়েক আগে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছিলেন, উন্মুক্ত সীমান্তের ওই পথ ধরেই হাজার হাজার গরু পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে। দুষ্কৃতীদের ভয়ে ধানজমি নষ্ট হলেও কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গীতালদহ বাজারের পরে ধরলা নদী ওই নদী পেরোসেই ভারতের আরও তিনটি গ্রাম বাঁধের কুঠি, জারিধরলা, দরিবস। ওই এলাকা দিয়েই সিতাই পর্যন্ত যাওয়া যায়। নদী থাকায় ওই এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায়নি। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা পুরোপুরি উন্মুক্ত। নদীর জল শুকিয়ে সেখানে বালুর চর পড়েছে। রাত হলে ওই এলাকায় বিএসএফের পাহারায় থাকে না বলে দাবি স্থানীয়দের। নদীপথে সক্রিয় হয়ে ওঠে দুষ্কৃতীরা।
বাসিন্দারা জানান, ঠিক যে জায়গায় নজরুল খুন হয়, সেখানে একসময় বিএসএফের পাহারার জন্য একটি ছাউনি দেওয়া ঘর তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে সেখানে কোনও পাহারা থাকে না। সেখানেই দুষ্কৃতীরা কুপিয়ে খুন করে নজরুলকে। নজরুল বাড়ি থেকে বাজারে গিয়েছিল, ফেরার পথে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে সন্দেহ। সেক্ষেত্রে দুষ্কৃৃতীরা বাঁধের কুঠিতে ঢুকে নজরুলকে খুন করে বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারে বলে ধারণা তদন্তকারী অফিসারদের। গীতালদহ-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আমিনুল মিয়াঁ বলেন, বিএসএফের নজরদারি ওই এলাকায় কম। সেই সুযোগ নিয়ে কিছু বাংলাদেশি দুষ্কৃতী সেখানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিএসএফের নজরদারি বাড়ানো উচিত।