স্মৃতিচারণায় চোখ ভিজল রাজকন্যার

জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে কোচবিহারের প্রয়াত মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণের স্মৃতিচারণায় কেঁদে ফেললেন তাঁর ভাইঝি কোটার মহারানি উত্তরাদেবী। সোমবার ছিল প্রয়াত মহারাজার জন্ম শতবর্ষ উদ্‌যাপন। সেই উপলক্ষে দিনভর একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন কোচবিহারের রাজকন্যা। প্রায় চার দশক বাদে রবিবার সপরিবারে তিনি কোচবিহারে পৌঁছন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫২
Share:

আবেগপ্রবণ উত্তরাদেবী। নিজস্ব চিত্র।

জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে কোচবিহারের প্রয়াত মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণের স্মৃতিচারণায় কেঁদে ফেললেন তাঁর ভাইঝি কোটার মহারানি উত্তরাদেবী। সোমবার ছিল প্রয়াত মহারাজার জন্ম শতবর্ষ উদ্‌যাপন। সেই উপলক্ষে দিনভর একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন কোচবিহারের রাজকন্যা। প্রায় চার দশক বাদে রবিবার সপরিবারে তিনি কোচবিহারে পৌঁছন।

Advertisement

সোমবার সকালে কোচবিহার রাজবাড়ি স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উত্তরাদেবী বলেন, “বহু বছর বাদে কোচবিহারে আসতে পেরে দারুণ অনুভূতি হচ্ছে। কোচবিহারের সঙ্গে আমার বহু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। ঠাকুমা, জ্যাঠা, বাবা-মা সবার কথাই মনে পড়ছে।” কথা বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। চোখের জল মুছতে দেখা যায় তাঁকে। কাঁপা গলায় বলেন, “রাজপ্রাসাদের ভিতরে সকালে বিশেষ বাদ্যযন্ত্র বাজানো হতো। সেই শব্দে ঘুম থেকে উঠে ছুটে আসতাম। দোতলায় সাদা একটি ঘরে যেতাম। সেখানে অনেক আসবাবপত্র সাজানো ছিল। অপূর্ব তার কারুকাজ।”

এ দিন সুযোগ না হলেও রাজপ্রাসাদ ঘুরে দেখার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন উত্তরাদেবী। তাঁর সঙ্গে এসেছেন তাঁর স্বামী কোটার মহারাজা মহারাও ব্রিজরাজ সিংহ, ছেলে কোটার যুবরাজ ইজরাজ সিংহ, পুত্রবধূ কল্পনা দেবী সাহেবা ও নাতনী ভবানীকে মহাতবও। উত্তরাদেবী বলেন, “সত্তরের দশকে উনি কোচবিহারে এসেছিলেন। আমি দ্বিতীয়বার এসেছি। আবার আসব।”

Advertisement

উত্তরাদেবীর মতই এ দিন মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণের স্মৃতিচারণা করেছেন জেলার বাসিন্দারা। এ দিন সকালে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ জন্ম শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি, কোচবিহার ক্ষত্রিয় সোসাইটি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠান হয়।

রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “রাজবাড়ির গেটের ফাঁক দিয়ে তাঁর পোলো খেলা দেখেছি। ১৯৬২ সালে মহারাজার শিকার করা বাঘ মাপজোক করা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। কোচবিহারের মানুষের জন্য তাঁর অবদান ভোলার নয়। কোচবিহারের রাজাদের ইতিহাস স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করব।”

বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “মহারাজা ওই আমলে কোচবিহারে চা বাগানের পাশাপাশি শ্রমিকদের চিকিত্‌সার জন্য হাসপাতাল পর্যন্ত করেছিলেন।” দিনহাটার ফব বিধায়ক উদয়ন গুহর আক্ষেপ, “মহারাজাকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে মহারাজার জন্যই কোচবিহার বাংলা তথা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।” ওই অনুষ্ঠানে কোচবিহারের জেলা ও দায়রা বিচারক রবীন্দ্রনাথ সামন্ত, পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইন্দ্রজিত্‌ রায়, কংগ্রেস বিধায়ক কেশব রায়, কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন প্রমুখও উপস্থিত ছিলেন।

এ দিন উত্তর প্রসঙ্গ পত্রিকার তরফে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ জন্মশতবর্ষ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেন উত্তরাদেবী। রাজপরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানানো হয়। সভাপতিত্ব করেন জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি প্রসেনজিত্‌ বর্মন।

১৯১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্ম হয় জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণের। ১৯২২ সালে তাঁর রাজ্যাভিষেক হয়। ১৯৭০ সালে প্রয়াত হন তিনি। প্রয়াত মহারাজার চিতাভস্ম কেশব আশ্রমে সমাধিক্ষেত্রে রাখা রয়েছে। এ দিন সেখানেও পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement