‘মানবিক’ কারণে কর্মীর স্বেচ্ছাবসরের আবেদন মঞ্জুর করে বিতর্কে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম। এনবিএসটিসি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই কর্মীর নাম কাশীনাথ পাল। সংস্থার বাস চালক ওই ব্যক্তির বাড়ি বালুরঘাটে। নিগমের বালুরঘাট ডিপোর অধীন বাস চালক কাশীনাথবাবু এপ্রিলে অবসর নেবেন। অসুস্থতার জন্য তিনি দীর্ঘদিন ডিউটিতে গরহাজির ছিলেন। ৩১ মার্চ কাশিনাথ কাজে যোগ দেন। ওই দিন স্বেছাবসর নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
ইনটাক অনুমোদিত নিগমের কর্মী সংগঠন নিগম কর্তৃপক্ষের নামে নিয়ম ভেঙে স্বেচ্ছাবসরের আবেদন মঞ্জুর করার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের দাবি, তিন বছর ওই ব্যক্তি সংস্থাকে না জানিয়ে গরহাজির ছিলেন। অনুপস্থিতি নিয়ে ডিপো কর্তৃপক্ষ কোচবিহারে সংস্থার দফতরে বহু বার চিঠি দেন। এমনকী তাঁর ওই দীর্ঘ ছুটি মঞ্জুর নিয়ে জটিলতা এখনও মেটেনি। তার পরেও নিয়ম ভেঙে গরহাজির থাকা কর্মীকে তড়িঘড়ি টেলিফোনে নির্দেশ পাঠিয়ে ডেকে এনে কাজে যোগ দেওয়ানোর পর স্বেচ্ছাবসর মঞ্জুর করা হয়েছে।
ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন নিগম কর্তৃপক্ষ। এনবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়দেব ঠাকুর বলেন, “ওই বাস চালক অসুস্থতার কথা জানিয়ে বিনা বেতনে গরহাজির ছিলেন। এই মাসেই তাঁর অবসর নেওয়ার কথা। সব দিক ভেবে খোঁজ নিয়েই আগের অনুমোদিত তালিকায় থাকা ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাবসরে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সমস্ত হিসাব নিকেশ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে পাওনা মেটানো হবে।”
নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ১৯৩ কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার তালিকা তৈরি হয়। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ কর্মী কোচবিহারে প্রথম দফার চেক নেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের ছুটি সংক্রান্ত জটিলতা নজরে আসায় সে সময় তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কাশীনাথবাবুর বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়। ৩১ মার্চ ওই কর্মীকে কাজে যোগ দেওয়ানোর পাশাপাশি অনুমোদনের কথা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। ইনটাক অনুমোদিত ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন আহ্বায়ক সুজিত সরকার বলেন, “২০১০-এর ১৬ সেপ্টেম্বর সংস্থাকে না জানিয়ে ওই কর্মী তিন বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেননি। নিয়ম অনুযায়ী গরহাজির থাকা কর্মীর ছুটি মঞ্জুর না হলে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া যায় না।” নিগমের ড্রাইভার্স অ্যান্ড তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, “কী ভাবে রাতারাতি কাজে যোগ দিয়ে তাঁর আবেদন মঞ্জুর হল সেটাই প্রশ্ন।”
কাশীনাথ পাল না বলে গরহাজির থাকার কথা অস্বীকার করেন। তাঁর কথায়, “হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় ছুটি নিতে হয়। তবে নিয়ম মেনে দরখাস্ত দিয়েছিলাম।” সংস্থা সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে ৫৮৯ কর্মীর স্বেচ্ছাবসর মঞ্জুর করেছে রাজ্য সরকার। সরকারি প্রকল্পে তালিকাভুক্তের জন্য ৯৫ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুমোদন হয়েছে। প্রথম দফায় সাড়ে ৯ কোটি টাকার চেক বিতরিত হয়েছে। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সাধারণ ভাবে অবসর নিলে ওই কর্মীর বড় অঙ্কের পাওনা নিগমকে মেটাতে হত। স্বেচ্ছাবসরের তালিকায় থাকা ব্যক্তিকে ভিআরএস দেওয়া হলে প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ থেকে পাওনা টাকা দেওয়া যাবে। সেখানে থেকেই আবেদন অনুমোদন হয়েছে।