কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে নির্বাচনে লড়াই করে শিলিগুড়ি পুরবোর্ড গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অথচ ৫ বছর ধরে কংগ্রেস কখনও তৃণমূল কখনও বামেদের সমর্থনে বোর্ড চালালেও সুষ্ঠু নাগরিক পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে দ্রুত পুর নির্বাচনের দাবিতে আসরে নেমে পড়ল বিজেপিও। মঙ্গলবার বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পুর কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি তোলেন। তাদের অভিযোগ, শহরের বাসিন্দারা কংগ্রেস, তৃণমূল জোটকে জিতিয়ে পুরবোর্ড চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। কিন্তু তারা পাঁচ বছরই চালাতে পারেনি। খখনও তৃণমূলকে নিয়ে কখনও বামেদের সমর্থনে বোর্ড চালিয়েছে কংগ্রেস। মেয়াদ না ফুরতেই মেয়র এবং তাঁর পারিষদরা ইস্তফা দিয়ে চলে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতি উন্নত নাগরিক পরিষেবার জন্য অন্তত ৫ বছর থাকতে পারে এমন পুরবোর্ড গঠনের জন্য অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি তোলেন বিজেপি নেতৃত্ব।
এ দিন বিজেপি’র প্রতিনিধি দল পুর কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা মেটানোর দাবি তোলেন। মেয়র এবং তার পারিষদরা ইস্তফা দেওয়ার পর বর্তমান পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। গত ৫ বছর কী ভাবে পুর বোর্ড চলেছে। সরকারের তরফে কী কী ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা মিলেছে, কী ভাবে সেই টাকা খরচ হয়েছে, কোন প্রকল্প হয়েছে, কোনটা অসমাপ্ত রয়েছে তা শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশের দাবি তোলেন।
বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলেন, “গত পুর নির্বাচনে যাদের উপর মানুষ আস্থা রেখে বোর্ড গড়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেনস তারা সেই কাজ কর্তব্য পালন করতে পারেননি। মানুষ এখন ৫ বছর পুরসভা চালাতে পারবে এমন কাউকে চাইছেন। যে ভাবে কেন্দ্রে দেশের মানুষ স্থায়ী সরকার গড়েছেন। সেই পথে হেঁটে শিলিগুড়িবাসীও স্থায়ী পুরবোর্ড গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাই আমরা দ্রুত নির্বাচন চাইছি।” সেই সঙ্গে বিজেপির অভিযোগ, বাম জমানাতেও শহরের বাসিন্দাদের উন্নত পরিষেবা তৎকালীন পুরবোর্ড দিতে পারেনি।
এদিন পুর কমিশনারের কাছে বাসিন্দাদের কাছে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন বিজেপি নেতৃত্ব। অভিযোগ, পাম্প মেশিন খারাপ হওয়ায় শিলিগুড়ি পুরসভা সংযোজিত ওয়ার্ডগুলির একাংশে পানীয় জল সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। জঞ্জাল সাফাই নিয়মিত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। রাস্তার ধারে আবর্জনা স্তূপাকারে জমে থাকছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তা, নিকাশি তৈরির কাজ থমকে রয়েছে। এই অচল পরিস্থিতি কাটানোর দাবি তোলেন। পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, “রাজ্য সরকারের তরফে এখনও নির্দেশ এসে পৌঁছয়নি। নির্দেশ এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পানীয় জল সরবরাহে সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে পুর কমিশনার জানান, পরেশনগর এলাকায় জল সরবরাহের পাম্প নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গত ২৮ মে থেকে সেই কারণে ৩৬-৪৪ নম্বর ওয়ার্ডগুলিতে জল সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে পাম্প মেশিন ঠিক করার কাজ চলছে। তবে জল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ নেই। জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে পাম্পমেশিন কেনার সিদ্ধান্তও হয়েছে। নাগরিক পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে তারা সচেষ্ট। বিজেপি’র দাবিকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না কংগ্রেস, তৃণমূল বা সিপিএম। সম্প্রতি ইস্তফা দিয়েছেন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। সেই ইউস্তফা পত্র পাঠানোর পরেও রাজ্য সরকার কিন্তু বোর্ড ভাঙেনি। গঙ্গোত্রী দেবী বলেন, “এত দিন শহরবাসীর ভালমন্দ বিষয়ে বিজেপি-কে দেখা যায়নি। এখন তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ সব বলছে।”
একই সুর তৃণমূলের কথাতেও। তৃণমূলের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল বলেন, “বিজেপি হঠাৎ করে এসে এ সব বললেই হল না। তারা কিছুই জানেন না। আমরা যে অল্প সময় পুরসভায় ক্ষমতায় থেকেছি সে সময় প্রচুর উন্নয়ন কাজ হয়েছে। বাকি সময় কংগ্রেস, সিপিএম মিলে এই বোর্ড চালিয়েছে। তারা পরিষেবা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বিজেপি’র বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর দাবি, বাম জমানাতেই এই শহরের সমস্ত উন্নয়ন কাজ হয়েছে।
অন্য দিকে, এই দিনই নানা রকম নাগরিক পরিষেবা ঠিক মতো মিলছে না অভিযোগ তুলে পুর কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিলেন সিপিএমের ঘোঘোমালি ও হায়দরপাড়া সুকান্তনগর লোকাল কমিটির সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, সংযোজিত ওয়ার্ডগুলিতে পানীয় জলের পরিষেবা ঠিক মতো মিলছে না। সাফাই পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। বিধবা, বয়স্ক বাসিন্দারা ভাতা পাচ্ছেন না। বিবিন্ন এলাকায় রাস্তা, ঘাট, নিকাশি নালা তৈরি করার মতো উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে।