স্কুল, পড়ুয়া সামলাচ্ছেন একা শিক্ষক

দু’টি ঘরের মাঝে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাস্টারমশাই। ডান দিকের ঘরে উঁকি দিয়ে মুখ বাড়িয়ে পড়ুয়াদের বামলা লিখতে বললেন। ওই ঘরের চেঁচামেচি থামতেই অন্য দরজার ঘরে ঢুকে চারের ঘরের নামতা লেখার নির্দেশ দিয়ে বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসলেন।

Advertisement

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২০
Share:

পড়ুয়া সামলাচ্ছেন সহ-শিক্ষক দেবাশিবাবু। ছবি: সন্দীপ পাল।

দু’টি ঘরের মাঝে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাস্টারমশাই। ডান দিকের ঘরে উঁকি দিয়ে মুখ বাড়িয়ে পড়ুয়াদের বামলা লিখতে বললেন। ওই ঘরের চেঁচামেচি থামতেই অন্য দরজার ঘরে ঢুকে চারের ঘরের নামতা লেখার নির্দেশ দিয়ে বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসলেন।

Advertisement

জলপাইগুড়ি শহরের দিনবাজার এলাকার ৪২ বছরের পুরনো কমলা নেহেরু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এটাই পরিচিত ছবি। খাতায়কলমে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৫। চারটি ক্লাসঘরের দু’টি পাকা। প্রধান শিক্ষক নেই। গত জানুয়ারি মাসে এক দিদিমণি অবসর নিয়েছেন। এর পর থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক সঙ্গে চারটি ক্লাস সামলাচ্ছেন একজন মাত্র শিক্ষক। পদ মর্যাদায় দেবাশিস গুহ সহ শিক্ষক হলেও, স্কুলের খাতাপত্র ঠিক রাখা থেকে সব কিছু দেখার দায়িত্বই তাঁর। তিনি জানান, হাজিরা খাতায় যে পড়ুয়াদের নাম রয়েছে তাঁদের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে দশজন স্কুলে হাজির থাকে কিনা সন্দেহ।

শহরের মাঝে পুরনো একটি স্কুলের এমন দুর্দশার কথা জানেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ ও পুরসভার কর্তারাও। যদিও তাঁদের কেউ দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টে যাবে এমন আশ্বাস দিতে পারেননি। জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই স্কুলে শিক্ষক পাঠানোর জন্য জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদকে চিঠি করা হয়েছে।” সংসদের চেয়ারম্যান ধরতিমোহন রায় বলেন, “আমি স্কুলের সমস্যার কথা জানি। শিক্ষক পাঠানোর জন্য শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি না মেলা পর্যন্ত কিছু করতে পারছি না।” স্কুলের বারান্দার সামনে সারি দিয়ে সব্জির দোকান। পড়ুয়ারা কখনও বাজারেও বেরিয়ে পড়ে। শিক্ষককে ক্লাসের ভেতরে দেখা যায় না কেন? দেবাশিসবাবু বললেন, “দুটো দরজার সামনে দাঁড়ালে চারটি ক্লাসের ছেলেমেয়েরা আমাকে দেখতে পায়। না হলে এত চিৎকার করে কিছু করার থাকে না। এভাবে ছেলেমেয়েরা কতটা শিখছে সেটা ভেবে, কিছু করার সুযোগ নেই।” কখনও তিনি ৪টি ক্লাসের পড়ুয়াদের নিয়ে মেঝেতে গোল করে পড়াতে বসেন। বলেন, “জানি এভাবে লেখাপড়া হয় না তবু চেষ্টা করি কারণ, ওরা তো শিখতে চায়। কিন্তু কি করব কতদিন থেকে বলেছি শিক্ষক পাঠাতে, কেউ শুনছে না।” স্কুলের পড়ুয়ারা বস্তি এলাকার গরিব পরিবারের ছেলেমেয়ে সোম বাশফোড়, নন্দিনী বাশফোড়ের মতো চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা খাতা খুলে দেখায় তাঁদের স্যার কেমন করে প্রতিদিনের পড়া নিজের হাতে লিখে দেন। অনেক কবিতা শিখেছি জানিয়ে ‘আতা গাছে তোতা পাখি’ বলতে শুরু করে শিশু শ্রেণির সনিয়া বাসফোড়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement