সন্ধ্যা নামলেই আতঙ্কে থাকতে হয় তাঁদের। রাস্তার আনাচে-কানাচে মদ্যপদের আড্ডা। হট্টগোল, চিৎকার ভেসে বেড়ায়। কারখানা ছেড়ে সেই সময় কেউ আর বাইরে বেরোতে চায় না। শ্রমিকদের অধিকাংশ সন্ধ্যা নামার আগেই চলে যান। ব্যবসায়ী সহ যে দু-একজন শ্রমিক থাকেন, তাঁরাও কারখানার ভিতরেই বসে থাকেন। দিনের পর দিন মদ্যপদের আড্ডা বেড়ে চললেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। কারখানা মালিকদের আশঙ্কা, মদ্যপদের ভিড়ে সমাজবিরোধীরা জড়ো হচ্ছে। যে কোনও সময় চুরি, ডাকাতি-সহ নানা অসামাজিক কান্ড ঘটতে পারে।
কোচবিহারের একমাত্র শিল্পকেন্দ্র চকচকার এই হালেও পুলিশ-প্রশাসন কেউ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। অবিলম্বে তাঁরা এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ির দাবি তুলেছেন। কোচবিহার ডিস্ট্রিক্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি সুকুমার সাহা বলেন, “ছোটখাটো চুরি নিত্যদিন হচ্ছে। যেভাবে মদ্যপ ও সমাজবিরোধীদের আড্ডা বসছে, তাতে যে কোনও দিন বড় ঘটনা ঘটতে পারে।”
তিনি জানান, কেন্দ্রের ভিতরে পুলিশ ক্যাম্পের জন্য পরিকাঠামো তৈরি হয়। সেটি পড়ে রয়েছে। বহুবার দাবি জানালেও পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রে একটি ঘর তৈরি হয়। সেটিও ব্যবহার করা হয়নি। সেখানেও সমাজবিরোধীদের আড্ডা বসছে। বিষয়টি শোনার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন।
২০০১ সালে চকচকায় ৭২ একর জমির উপর ওই শিল্প কেন্দ্র তৈরি হয়। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ১২টি কারখানার উদ্বোধন করেন। পরে রাইস মিল, হাসকিং মিল, প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির কারখানা, টুথ পাউডার, খাতা তৈরি, সরষের তেল তৈরির মিল, পাটজাত ও তুলোজাত সামগ্রী তৈরি, বিস্কুট, মশারি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির ৬৫টি কারখানা তৈরি হয়। কয়েক হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করেন। নানা কারণে বর্তমানে অবশ্য ১৭টি কারখানা বন্ধ হয়ে রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, শিল্পকেন্দ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। এমনকি শিল্পকেন্দ্রের ভিতরে থাকা পথবাতিগুলির অনেকগুলিই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রশাসনকে একাধিক বার জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিল্পদ্যোগী সুদীপ চক্রবর্তী, অরিন্দম দাস, বাপি রক্ষিতরা বলেন, “কেন্দ্রের চারদিক খোলা। পাঁচিল নেই। এই অবস্থায় পুলিশের পাহারা থাকা খুব জরুরি। সন্ধ্যার পর এলাকার পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সে জন্যই পুলিশ ফাঁড়ির দাবি করা হয়েছে।”
জেলা পুলিশের তরফে বিষয়টিও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।