কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের পরে এ বার বামেরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার ‘অপপ্রয়োগে’র নালিশ জানাল। শুক্রবার সকালে দার্জিলিঙের রাজভবনে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করে জেলা বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধি দল। রাজ্যপালকে দেওয়া স্মারকলিপিতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীদের মারধর করা-সহ শিলিগুড়ি পুরসভা এবং মহকুমা পরিষদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ বিষয়গুলি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার আর্জিও রাজ্যপালকে জানিয়েছে বামেরা। এর আগে জেলা কংগ্রেসও দার্জিলিঙে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেয়। তারাও গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলেছিলেন।
মন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে নালিশ জানানোর সঙ্গে জিটিএ-র কাজে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগও রাজ্যপালকে জানিয়েছেন বামেরা। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এ দিন রাজভবনে বামেদের প্রতিনিধি দলের সাত সদস্য গিয়েছিলেন। রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে অশোকবাবু বলেন, “জাতীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ এবং সিবিআই রাজ্য সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করছে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন। অথচ জিটিএ-এর কাজেও রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেগুলিও রাজ্যপালকে জানানো হয়েছে।” এ দিন বামেদের দেওয়া স্মারকলিপিতে মূল অভিযোগ ছিল, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী নানা ভাবে তাঁর ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছেন। কংগ্রেসের মতো বামেদের স্মারকলিপিতেও গত ২৮ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ির রামঘাট শ্মশানে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা মারধরের অভিযোগের উল্লেখ করা হয়েছে। বামেদের দাবি, মন্ত্রী নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রশাসনকে কোনও পদক্ষেপ করতে দেননি। উল্টে অভিযোগকারীকেই গ্রেফতার করিয়ে বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করেছেন বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে।
একই ভাবে শিলিগুড়ি পুরসভা এবং মহকুমা পরিষদের ক্ষমতাও ‘অনৈতিক ভাবে’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন বলে অশোকবাবুদের অভিযোগ। পুরসভা ও মহকুমা পরিষদ, দু’ক্ষেত্রেই বোর্ডের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও, নির্বাচন না করিয়ে রাজ্য সরকার প্রশাসক বসিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সেই প্রশাসকদের উপর মন্ত্রিত্বের প্রভাব খাটিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী নিজেই নিয়ন্ত্রক হয়ে বসেছেন বলে বামেরা রাজ্যপালকে নালিশ জানিয়েছেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোকবাবুর অভিযোগ, “মন্ত্রী সংবিধানকে লঙ্ঘন করছেন। পুলিশ ও পার্টির নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি সাধারণ বাসিন্দাদের মারধর করছেন। পুরসভা, মহকুমা পরিষদের ক্ষমতা মন্ত্রিত্বের প্রভাব খাটিয়ে কুক্ষিগত করছেন। রাজ্যপালকে সব বিষয়ে জানানো হয়েছে।” অশোকবাবু দাবি করেছেন, স্মারকলিপিতে সব অভিযোগ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিস্তারিত জানিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে রাজ্যপালকে। এসজেডিএ-এর আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছে বামেরা।
তবে বামেদের অভিযোগকে আমল দেননি তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ পাল। জেলা কমিটির ওই নেতা বলেন, “যে কেউ রাজ্যপালের কাছে যেতে পারেন। বামেদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন।”