বক্সিরহাটে আহত জামেলা বিবি।
এক মহিলার উপরে আক্রমণের পরে রহস্য দানা বেঁধেছে। এই ঘটনায় রাজনীতির রংও লেগে গিয়েছে। যে মহিলাকে আক্রমণ করা হয়েছে তাঁর স্বামী সম্প্রতি সিপিএম ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। বিজেপি-র দাবি, তাঁদের দলের ক্রমশ শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে বলেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা ওই ব্যক্তির স্ত্রীকে আক্রমণ করেছে। কাদের আলি বলে ওই ব্যক্তিও একই দাবি করেছেন। তবে তৃণমূলের বক্তব্য, ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই।
জখম মহিলার নাম জামেলা বিবি। তিনি কোচবিহারের বক্সিরহাট থানার ফলিমারি গ্রামের বাসিন্দা কাদের আলির প্রথম পক্ষের স্ত্রী। বুধবার রাতে তাঁর উপরে আক্রমণ হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম ওই মহিলাকে তখন প্রথমে তুফানগঞ্জ ও পরে কোচবিহার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, ওই মহিলার বক্তব্যে অসঙ্গতি রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে চিকিৎসক ও পুলিশের কাছে জামেলা বিবি বলেছিলেন, কোনও এক জন ব্যক্তি রাতে তাঁর ঘরে ঢুকে লণ্ঠন নিভিয়ে দিয়ে তাঁকে কোপ মেরে পালায়। কিন্তু পরে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর পক্ষ থেকে যে অভিযোগপত্র বক্সিরহাট থানায় পাঠানো হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে ৫ তৃণমূল কর্মী তাঁকে ঘরে ঢুকে কুপিয়েছে। বুধবার রাতে তিনি আক্রান্ত হলেও কেন বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অভিযোগ করা হল না, তা-ও পরিষ্কার নয়। কাদের আলির অবশ্য বক্তব্য, “ঘটনার পরে আমরা হকচকিয়ে যাই। তাই অভিযোগ করায় অসঙ্গতি থাকতে পারে।” এত দেরি হল কেন? কাদের আলির জবাব, “হাসপাতালে ব্যস্ত থাকায় অভিযোগ করতে দেরি হয়।”
সপ্তাহখানেক আগে এলাকার শতাধিক লোকজনের সঙ্গে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন কোচবিহারের বক্সিরহাট থানার ফলিমারি গ্রামের কাদের আলি। পঞ্চাশোর্ধ্ব কাদের পেশায় চাষি। তাঁর দাবি, “সিপিএম কর্মী হওয়ায় নিয়মিত নানা ভাবে অত্যাচার হত। কিন্তু দলের নেতারা সুরক্ষা দিতে পারবেন না বলায় বিজেপি-তে যোগ দিয়েছি। আমার সঙ্গে এলাকার অনেক বাম সমর্থকই যোগ দেন।” তাঁর কথায়, “এর পরেই লোকজনের মুখে শুনতে পাই, আমাকে মারা হতে পারে। তার পরেই আমার প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে কোপানো হল। তৃণমূলের লোকজনের কাজ। আমরা থানায় ৫ জনের নামে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছি।”
কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “ওই মহিলাকে কেউ তো কুপিয়েছে সেটা ঠিক। কিন্তু, কী কারণে তা ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কেনই বা মহিলা দুরকম বয়ান দিচ্ছেন সেটাও স্পষ্ট হওয়া দরকার।” বক্সিরহাট থানা সূত্রের খবর, রাত পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কোনও মামলা দায়ের করেনি।
তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দাবি করেন, বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে তৃণমূলের কয়েকজনের নাম ওই ঘটনায় জড়াতে চাইছে। তাঁর প্রশ্ন, “যখন ঘটনা ঘটে, তখন বাড়িতে কে কে ছিলেন? মহিলা স্বামী ও সতীন বা কোথায় ছিলেন? হাসপাতালে কেন মহিলা জানিয়েছিলেন, অন্ধকারে হামলাকারীকে চিনতে পারেননি? পরে ৫ জনের নাম জানা গেল?”