মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে ছুটি দেওয়া হল স্কুলে, বিতর্ক

স্কুলের সীমানা প্রাচীর এবং সাইকেল স্ট্যান্ডের উদ্বোধন উপলক্ষে মন্ত্রীর অনুষ্ঠান ঘিরে একাধিক স্কুল ছুটি দেওয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুর এলাকার তিনটি স্কুলে সীমানা প্রাচীর বা সাইকেল স্ট্যান্ডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর ছুটি দিয়ে দেওয়ায় এমনই অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:২৯
Share:

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিধায়ক তহবিলের টাকায় স্কুলগুলিতে সীমানা প্রাচীর এবং সাইকেল স্ট্যান্ড তৈরির ওই প্রকল্পগুলির উদ্বোধন হয়। স্কুলের সময়ে ওই অনুষ্ঠান করা এবং তার পর ছুটি দিয়ে দেওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। যে তিনটি স্কুলে প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে শিউমঙ্গল মেমোরিয়াল হিন্দি হাইস্কুল, হায়দরপাড়া জুনিয়র গার্লস স্কুল এবং বাল্মিকী বিদ্যাপীঠ। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র দার্জিলিং জেলা সম্পাদক তমাল চন্দ বলেন, “মন্ত্রীর সম্মানেই ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিলে কী আর করা যাবে।”

Advertisement

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “আমি স্কুলগুলিতে প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তা করে চলে এসেছি। স্কুল কেন ছুটি হল, বলতে পারব না। তা ছাড়া আমার কাছে কর্তৃপক্ষ জানতে চাইলে স্কুল ছুটি না দিয়ে ক্লাস করার পরামর্শই দিতাম।” স্কুলে মন্ত্রীর উদ্যোগে করা উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে এমন প্রশ্ন ওঠায় স্কুল পরিদর্শকের দফতর থেকেও সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি কেউ। স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) প্রাণ গোবিন্দ সরকার বলেন, “কী কারণে ছুটি দেওয়া হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি। মন্ত্রীর অনুষ্ঠান ছিল। সে কারণেই ছুটি দেওয়া হয়েছে কি না দেখতে হবে।”

সংশ্লিষ্ট স্কুল এবং শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিন শিউমঙ্গল মেমোরিয়াল হিন্দি হাইস্কুলে এবং হায়দরপাড়া জুনিয়র গার্লস স্কুলে সীমানা প্রাচীর উদ্বোধনের অনুষ্ঠান হয়। শিউমঙ্গল স্কুলে ২৩ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই কাজ হয়েছে। আরও ১১ লক্ষ টাকা খরচ করে দ্বিতীয় দফায় কিছু কাজ হবে। হাযদরপাড়া জুনিয়র গার্লস স্কুলে খরচ হয়েছে ১৮ লক্ষ টাকার মতো। বাল্মীকি বিদ্যাপীঠে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা খরচ করে সাইকেল স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। এসজেডিএ-র তরফে কাজগুলি করা হয়েছে।

Advertisement

এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ শিউমঙ্গল হাইস্কুলে অনুষ্ঠানে যান মন্ত্রী। উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আগের দিন বৈঠক করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই মতো ঠিক হয় এ দিন অনুষ্ঠানের পর ছুটি দেওয়া হবে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্র সিংহ বলেন, “স্কুলের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্কুলে পড়ুয়ারা যোগ দিয়েছে। আনন্দ করেছে। তাই এর পর আর স্কুল করানো হয়নি। স্কুল পরিচালন কমিটির তরফে প্রয়োজনে স্কুলে দু’একটি ছুটি দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।”

হায়দরপাড়া জুনিয়র গার্লস স্কুলের তরফে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শ্রবণা দাশগুপ্ত জানান, বেলা সাড়ে বারোটার পর তাদের অনুষ্ঠান হয়েছে। সেই মতো দু’টি পিরিয়ড হয়েছে। তার পর অনুষ্ঠানের জন্য আর কোনও ক্লাস করানো যায়নি। এমনিতেই এর পর মিড ডে মিল হয়। তার পর এ দিন ক্লাস হয়নি। তা ছাড়া এ দিন স্কুলের ওই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এলাকার একটি ক্লাবকে আর্থিক অনুদানও বিলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি।

বাল্মীকি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক অনুপা দাস বলেন, “আমরা ঠিক করেছিলাম উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর ক্লাস হবে। নিয়ম মতো, ১০ টা ৫০ মিনিটে এ দিন স্কুল শুরু হয়। ঠিক ছিল সাড়ে ১১ টায় অনুষ্ঠানের পর ক্লাস হবে। মন্ত্রী যখন আসবেন, সেই মতো ক্লাস বন্ধ হবে। মন্ত্রী আসার পর স্কুলের গেট খুলে দেওয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠানে অভিভাবকেরাও যোগ দিয়েছেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ অভিভাবকদের সঙ্গে চলে যায়। পরে আমরাও অন্য পড়ুয়াদের ছুটি দিয়ে দিয়েছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement