ভোটাধিকার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবার ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কোচবিহার জেলার স্কুল পড়ুয়াদের মাধ্যমে অঙ্গীকারপত্র পাঠিয়ে তাদের অভিভাবকদের ভোট দেওয়ায় উত্সাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সংকল্পপত্র’। এই চিঠিতে পড়ুয়ার ভোট দেওয়ার ছাপানো আর্জিতে সই করে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেবেন। যার অন্য অংশে অভিভাবকরা পড়ুয়াদের আবেদনের ভিত্তিতে তাদের বয়ানে ছাপানো বক্তব্যে সই করে ভোট দেবেন বলে সম্মতি জানাবেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে ছাপানো ওই ‘সংকল্পপত্র’ বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যে পাঠানো শুরু হয়েছে হয়েছে কোচবিহারে। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে ওই সংকল্পপত্র পাঠানো হচ্ছে। স্কুলের মাধ্যমে কোনও চিঠি পেলে অভিভাবকেরা সেটার বাড়তি গুরুত্ব দেন। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা অনেকটা সহজ হবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ১৫ হাজার সংকল্পপত্র ছাপানো হয়েছে। এক পাতার ওই সংকল্পপত্রের প্রথম অংশে ছাত্র ছাত্রীদের বয়ানে, বাবা, মায়ের উদ্দেশে লেখা হয়েছে, “আমাকে পড়াশোনা শেখানর জন্য আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ। শিক্ষা আমার জীবনকে উজ্জ্বল করবে। গণতন্ত্রে নিজের পচ্ছন্দ মাফিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তা আমাকে জোগাবে শক্তিও। তোমাদের ও পরিবারের অনান্যদের প্রতি আমার মিনতি, আমাদের সকলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তোমরা সকলে ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার কর।” ছাত্রছাত্রীরা ওই অংশটি স্কুলে সই করে বাড়ি নিয়ে অভিভাবকদের দেবে। ওই বয়ানের কিছুটা নীচেই আবার অঙ্গীকার শিরোনামে অভিভাবকদের উদ্দেশে ছাপানো বয়ানে পরিবারের মোট কতজন ভোটার রয়েছে তার তথ্য দেবেন। সেই চিঠিতে লেখা হয়েছে, “আমরা সকলে মিলে অঙ্গীকার করছি, আমরা আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে অবশ্যই ভোট দেব।” সেই সঙ্গে স্বাক্ষরকারীর সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের নম্বর ও মোবাইল নম্বর সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে। অভিভাবকদের সই করে ওই সংকল্পপত্রটি ফের স্কুলের মাধ্যমে ফেরত নেবেন প্রশাসনের কর্তারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু স্কুলে ইতিমধ্যে ওই সংকল্পপত্র পৌঁছে গিয়েছে। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যার তুলনায় অনেক কম সংখ্যক সংকল্পপত্র পাঠান হয়েছে। কোনও ক্লাসের পড়ুয়ায়দের দেওয়া হবে সে বিষয়েও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই বলে জানানো হয়েছে। সিতাই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিমেষ ভট্ট বলেন, “স্কুলে প্রায় তিন হাজার পড়ুয়া অথচ মাত্র দুশো সংকল্পপত্র পাঠানো হয়েছে। শুধুমাত্র উঁচু ক্লাসেই তাই সেগুলি দেওয়া হচ্ছে।” সুনীতি অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “কোন ক্লাসের মেয়েদের সংকল্প পত্র দিতে হবে ওই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ পাইনি।”
নাটাবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত সেন, মহারাণি ইন্দিরা দেবি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মাধুরী মুখোপাধ্যায়রা জানিয়েছেন, তারা এখনও সংকল্পপত্র পাননি। জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক কুমার ভূষাল বলেন, “মহকুমা প্রশাসনের মাধ্যমে সংকল্পপত্র পাঠানর কাজ শুরু হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সব স্কুলে তা পাঠাতে হবে। দরকার মতো ফের সে সব ছাপানো হবে। কোন স্কুল সংকল্প পত্র পায়নি, তা খোঁজ নিচ্ছি।”