নির্বাচন হতে এখনও দিন কয়েক বাকি রয়েছে। ইতিমধ্যেই মালদহ জেলার একাধিক কলেজের ছাত্র সংসদের দখল নিয়েছে টিএমসিপি। কোনও কলেজেই বিরোধীরা সাহস করে মনোনয়ন পত্র তুলতে যেতে পারেনি। কোনও কলেজে আবার মনোনয়ন তুলতে গেলেও ক্ষমতাসীন টিএমসিপি-র বাধা এড়াতে পারেনি বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি।
জেলার একাধিক কলেজে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিএমসিপি জেতায় বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির বক্তব্য, গায়ের জোরে ছাত্র সংগঠনগুলির দখল রেখেছে তারা। স্বচ্ছ ভাবে নির্বাচন হলে তারা হয়তো জিততে পারত না। যদিও টিএমসিপি এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের পাল্টা জবাব, কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা পাশে না থাকায় বিরোধীরা মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি।
আগামী ২৯শে জানুয়ারি মালদহ জেলার কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন রয়েছে। এই জেলায় ১১টি কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে মানিকচক কলেজ ও হরিশ্চন্দ্রপুর কলেজের পরিকাঠামো না থাকায় নির্বাচন হবে না বলে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ন’টি কলেজ ও দু’টি কারিগরি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কলেজগুলিতে মনোনয়ন তোলা ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
মালদহ কলেজে মোট ৩৩টি আসন রয়েছে। টিএমসিপি কর্মীরা সব ক’টি আসনে মনোনয়নপত্র তুললেও বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি একটিও আসনে মনোনয়নপত্র তোলেনি। ফলে এই কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় টিএমসিপি। শহর জুড়ে বিজয় মিছিল বেরোয়।
পুরাতন মালদহের গৌড় কলেজ ৩৫টি আসন রয়েছে। মনোনয়নপত্র তোলার দিন সকালেই সব ক’টি আসনে মনোনয়নপত্র তুলে নেন। তারপরেই টিএমসিপি প্রার্থীরা কলেজে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। এবিভিপি কর্মীরা মিছিল করে মনোনয়নপত্র তুলতে গেলে প্রথমে তাদের বাধা দেওয়া হয়। শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। আহত হন বেশ কয়েকজন। এসএফআই ও ছাত্র পরিষদ মনোনয়নপত্র তুলতে কলেজেই যায়নি। ছাত্র সংসদ টিএমসিপির দখলে চলে যায়।
মালদহের পলিটেকনিক কলেজেও বিরোধীরা না যাওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে টিএমসিপি। মহিলা কলেজেও একই ছবি।
তবে বেশ কয়েকটি কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠন এক হয়ে মনোনয়নপত্র তুলেছে। কালিয়াচক কলেজ, সাউথ মালদহ কলেজ, গাজল কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি জোটবদ্ধ হওয়ায় তাদের আটকানোর সাহস দেখায়নি টিএমসিপি বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
পাকুয়া কলেজে মনোনয়নপত্র তোলার দিনই টিএমসিপি ইচ্ছা করে সময় নষ্ট করে বলে অভিযোগ। চাপে পড়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্বাচন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। মালদহ আইটিআই কলেজে পরিকাঠামো নেই বলে নির্বাচন বন্ধ করে দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, কলেজে কলেজে দাদাগিরি করে টিএমসিপি নিজের দখলে ছাত্র সংসদ রেখেছে। আর যে কলেজগুলিতে তাদের কোনও অস্তিত্ব নেই, সেই কলেজগুলিতে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে।
এবিভিপি-র জেলা সম্পাদক দীপ ঘোষ বলেন, “ওরা ভাল করেই জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে একটিও ছাত্র সংগঠন ওদের দখলে থাকবে না। তাই কোথাও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে, কোথাও গায়ের জোরে ছাত্র সংসদ দখল করেছে।”
ছাত্র পরিষদের জেলা নেতা তথা গাজল ব্লকের সভাপতি প্রেম চৌধুরীর আবার বক্তব্য, বাম আমলে যেমন বাম ছাত্রসংগঠনগুলি ভোট নিয়ন্ত্রণ করেছে, ঠিক সেই কায়দায় শাসক দলের ছাত্র সংগঠন ভোট নিয়ন্ত্রণ করছে।”
যদিও টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, জেলায় বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির পাশে ছাত্র ছাত্রীরা নেই। তাই তারা মনোনয়নপত্র তুলতে আসতে পারেনি। ইতিমধ্যেই আমরা বেশ কয়েকটি কলেজে জয়ী হয়েছি। নির্বাচন হলে সব ক’টি কলেজেই আমরা জিতব।”