বদলির নির্দেশ ঘিরে ভোট বিধি ভঙ্গের অভিযোগ ওঠায় দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি স্থগিত হল। বুধবার জেলাশাসকের নির্দেশে জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) পঙ্কজ সরকার বদলি সংক্রান্ত আদেশ বাতিল করেন। ফলে, জেলা জুড়ে ৩১২ জন প্রাথমিক শিক্ষককে ফের পুরানো স্কুলে ফিরতে হচ্ছে। ডিআই পঙ্কজ বলেন, “নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের কারণে শিক্ষক বদলি স্থগিত হয়েছে।”
বিরোধীরা শুধু নন, জেলা পরিষদে তৃণমূলের সহকারী সভাধিপতি তথা জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের নির্বাচিত সদস্য কল্যাণ কুণ্ডুু থেকে জেলা পরিষদ শিক্ষা স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সুনন্দা বিশ্বাস প্রশ্ন তুলেছেন, এক বারে এত সংখ্যক শিক্ষককে কী ভাবে বদলি করা হয়েছে? সহকারী সভাধিপতির দাবি, জেলা পরিষদের ৩ জন এবং পঞ্চায়েত সমিতির ৩ জন কর্মাধ্যক্ষ প্রাথমিক স্কুল সংসদের নির্বাচিত সদস্য। অথচ তাঁদের সঅন্ধকারে রেখে ওই বদলি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সিপিএম জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরী বিধিভঙ্গের অভিযোগ করে নির্বাচন আধিকারিককে নালিশ জানান। সংসদ চেয়ারম্যান বাচ্চু হাঁসদা বলেন, “ডিআই ওই বদলি করেছেন। যা বলার তিনিই বলবেন। তবে অনিয়ম হয়নি” তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “যা হল, তা ঠিক হয়নি। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চক্রান্ত হয়েছে। গোটা বিষয়টি দলের উপর মহলে জানানো হচ্ছে।”
বাম শিক্ষক সংগঠন নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির(এবিপিটিএ) জেলা সম্পাদক অভিমন্যু দে অভিযোগ করেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মেমো নম্বর দিয়ে ওই বদলির নির্দেশে ডিআই সই করেন। চেয়ারম্যান ৫ মার্চ লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার দিন রাতে শিক্ষকদের বদলির আদেশ হাতে হাতে বিলি করেন। ৬ মার্চ ও তারপর থেকে প্রথম দফায় ৩১২ জন এবং তার পরে আরও বেশ কিছু শিক্ষক নতুন স্কুলে যোগ দেন। তাঁর বক্তব্য, “২০০৫ ও ২০০৬ সালে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের দূরের স্কুল থেকে কাছের স্কুলে বদলি করার সিদ্ধান্তের কথা চেয়ারম্যান জানালেও পরবর্তীতে নিয়ম ভেঙে ২০০৮ ও ২০১০ সালের শিক্ষকদেরও বদলি করা হয়েছে। যা বিধি বহির্ভূত।”
আরএসপির সারা বাংলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সহ সম্পাদক প্রাথমিক স্কুল সংসদের সদস্য অমিত সাহার অভিযোগ, “অবৈধ ভাবে ওই বদলি করা হয়েছে। সব সমিতির প্রতিনিধিদের নিয়ে চেয়ারম্যান মুখে ওই বদলি পদ্ধতির কথা ঘোষণা করে পরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। নির্বাচন ঘোষণার দিন রাতারাতি কী উদ্দেশ্যে ওই বদলি করা হল, তার তদন্ত করতে হবে।”
ওই ঘটনায় জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদার ভূমিকায় ক্ষুব্ধ তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র। তিনি এই প্রসঙ্গে অভিযোগ করে বলেন, “সব শিক্ষককে একযোগে বদলি করায় অনিয়মের নালিশ পেয়ে আগেই ওই প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। তা ও রাতারাতি কেন ওই কাজ করা হল তা বিধায়কের কাছে জানতে চাওয়া হবে।”