মালদহের মানিকচকের পর নির্বাচন পরবর্তী গোলমালে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল জেলারই বৈষ্ণবনগর থানার চন্দ্রনারায়ণপুর এলাকা।
শুক্রবার মানিকচকের লস্করপুরে ভোটের পরদিন সকালে চায়ের দোকানে প্রাণঘাতী হামলায় মৃত্যু হয় তৃণমূলের এক নির্বাচনী এজেন্টের। সিপিএম ওই হামলা চালায় বলে অভিযোগ। গ্রেফতার হয় চার জন। বৈষ্ণবনগরে দুই তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমাবাজি ও বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর, লুঠপাটের অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। শুক্রবার গভীর রাতে ওই ঘটনা ঘটে। কেউ হতাহত না হলেও রাতের ওই ঘটনার জেরে গোটা এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটটি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃত আইনাল শেখ কংগ্রেস কর্মী বলে দাবি করেছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই ঘটনা বলে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কংগ্রেস অস্বীকার করেছে। মালদহের পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলার ঘটনায় এক জনকে ধরা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মানিকচকের ঘটনায় শনিবার আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
পুলিশ ও তৃণমূল সূত্রের খবর, চন্দ্রনারায়ণপুর এলাকার আইজুদ্দিন শেখ ও ফিটু শেখ তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। আগে কংগ্রেস করলেও গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তারা তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু ওই দুই কর্মীকে তৃণমূল ছেড়ে ফের কংগ্রেসে ফেরার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। তা না হওয়ায় ভোটের পর দিন গভীর রাতে প্রায় জনা কুড়ি কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক তাঁর বাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে প্রথমে দুজনের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়। তার পর বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর করে লুঠপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ। হামলার সময় পরিবারের লোকজনদের নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তারা প্রাণে বেঁচে যান বলে দুই তৃণমূল কর্মী জানিয়েছেন।
আইজুদ্দিন শেখের অভিযোগ, “ভোটের আগে থেকেই আমাদের ফের কংগ্রেসে ফেরার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তাতে রাজি না হওয়ায় হুমকিও দেওয়া হয়। প্রাণে মেরে ফেলতেই ওরা রাতে হামলা চালায়। কোনওক্রমে পালিয়ে বাঁচি।”
জেলা তৃণমূল সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্রের দাবি, “ভোটের পর দিন সকালে সিপিএম মানিকচকে দলের এক কর্মীকে খুন করল। দলের আর এক কর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। একই দিনে রাতে ফের দুই তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুঠপাট চালাল কংগ্রেস। দুই কর্মীর অপরাধ তারা তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরতে চায়নি। ভোট মিটতেই কংগ্রেস ও সিপিএম জেলায় তৃণমূল কর্মীদের উপর সন্ত্রাস চালাতে শুরু করেছে।”
বৈষ্ণবনগরের কংগ্রেস বিধায়ক ইশা খান চৌধুরী অবশ্য তৃণমূলের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “কংগ্রেস হামলায় বিশ্বাসী নয়। তৃণমূলীরাই ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। যা ঘটেছে তা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ঘটেছে।”