স্রেফ অনুদান বা চাল বিলি করে বন্ধ বাগানের অপুষ্টি ঠেকানো যাবে না। শ্রমিকদের তরফে বারেবারে নেতা-মন্ত্রীদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাগান না খুললে যে অসুস্থ শ্রমিকদের মৃত্যু ঠেকানো কষ্টসাধ্য, সেটাও একান্তে মানছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই। এই অবস্থায়, মঙ্গলবার দু’টি বন্ধ বাগানে গিয়ে দ্রুত তা খোলানোর জন্য কড়া আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যের ৪ মন্ত্রী। যা শোনার পরে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন শ্রমিকপক্ষ। তবে সরকারি তরফে যা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তাতে পুজোর আগে সব ক’টি বন্ধ বাগান খোলানো হয়তো সম্ভব হবে না।
এদিন দুপুরে প্রথমে জলপাইগুড়ির বন্ধ রায়পুর বাগানে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। তাঁরা বিকেলে যান রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে। সেখানে বাগান না খোলা পর্যন্ত শ্রমিকদের বাড়তি রেশন, রোজ স্বাস্থ্যশিবির সহ জীবনধারণের যাবতীয় ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন তাঁরা। এর পরেই মন্ত্রীরা শ্রমিকদের জানিয়েছেন, শীঘ্রই বন্ধ বাগানের মালিকদের বৈঠকে ডাকা হবে। তাঁদের বাগান খোলার জন্য বলা হবে। মালিকপক্ষ বৈঠকে না এলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।
তৃণমূল নেতা সৌরভ চক্রবর্তীর উদ্যোগে সম্প্রতি রায়পুর চা বাগানে কাজ শুরু হয়েছে। গত ২৯ জুন রায়পুর বাগানে গিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। সেখানে শ্রমিকেরা রেশনের চালের মান নিয়ে ক্ষোভ জানান। এদিন ফাগু ওঁরাও, বুধা মুণ্ডার মতো শ্রমিকরা খাদ্যমন্ত্রীকে জানান, এখন খুব ভাল চাল পাচ্ছেন তাঁরা। তিনি সুমি মুণ্ডা নামে এক শ্রমিককে ডেকে জানতে চান, চিকিৎসা বিষয়ে কিছু বলার আছে? সুমি মাথা নেড়ে বলেন, এখন সব ওষুধ মিলছে।
গৌতমবাবু স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানান, ২৮টি গীতাঞ্জলি এবং ৭৪টি ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের ঘর চা বাগানে তৈরি করে দেওয়া হবে। ৫১৪টি বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করা হবে। বাগানের শ্রমিক এতোয়া মুণ্ডা, বুধুয়া ওঁরাও জানতে চান, নতুন মালিক রায়পুর বাগান নিলেও জমির লিজ পাননি বলে তাঁরা শুনেছেন। শ্রমমন্ত্রী বলেন, “তাড়াতাড়ি লিজের ব্যাপারটা ঠিক হয়ে যাবে।” এরপরে মন্ত্রীরা শ্রমিক কলোনিতে গিয়ে জনে জনে কথা বলে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা মিলছে কি না, তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখে চলে যান রেডব্যাঙ্ক বাগানে।
দু’টি বাগান পরিদর্শন শুধু নয়, মন্ত্রীরা জানিয়ে দেন, বন্ধ বাগান ছাড়াও ১৮টি রুগ্ণ বাগানে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হবে। সে জন্য পৃথক রেশন দোকান খোলানো হবে। ওই রেশন দোকান চালাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী। সব ক’টি বন্ধ বাগানে শ্রমিকদের ভাতা বাবদ মাসে ১৫০০ টাকা দেবে রাজ্য সরকার। পুজোর মধ্যে বাগান না খুললে বোনাস হিসেবে এক মাসের ভাতা বাড়তি দেওয়া হবে।