নির্বাচন বিধির গেরোয় কৃষকদের মিনি কিট ও ভতুর্কির পাট বীজ বিলি করতে পারছে না কৃষি দফতর। জেলার ব্লকে দু’হাজারেরও বেশি প্রান্তিক ও দুস্থ কৃষককে বিনামূল্যে পাট বীজের মিনি কিট প্রাপকের তালিকায় রাখা হয়েছে। ২০ টাকা প্রতি কেজি দরে ৪০ টন পাট বীজ ভতুর্কিতে বিলির পরিকল্পনা কৃষি দফতর নিয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ আগে বিভিন্ন ব্লকের চাষিদের সরবরাহের জন্য বীজ পৌঁছেও গিয়েছে। যদিও, লোকসভা ভোটের আচরণ বিধি লাগু হয়ে যাওয়ায় সেই বীজ বিলি প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতির সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী খোলা বাজারে চড়া দামে পাট বীজ বিক্রি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাধারণভাবে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে পাট চাষ করা হয়। কোচবিহারে লোকসভা নির্বাচন হবে ১৭ এপ্রিল। ফলে পাট চাষিদের চিন্তা আরও বেড়েছে, কেননা বীজ বিলি বন্ধ থাকবে। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “পাট বীজ বিলি সংক্রান্ত এ রকম সমস্যার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরের জেলা আধিকারিকদের তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সেখান থেকেই মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতরে গোটা বিষয়টি জানানোর কথা। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
মুখ্য কৃষি আধিকারিক অসিত পাত্র বলেন, “পুরো বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে শুনেছি।” ভোটের মুখে এই জটিলতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও তরজা শুরু হয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “ভোট বিধির কথা মাথায় রেখে তড়িঘড়ি শিলান্যাস করা হল, অথচ রাজ্য সরকার পাট বীজ বিলি নিয়ে আগাম পরিকল্পনা নিল না। যার জেরেই চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন।” বিজেপি জেলা সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দেও বলন, “ভোট বিধি চালুর আগে পাট বীজ বিলি করলে এই সমস্যাই হত না। বিকল্প উপায় বিবেচনা করতে কমিশনকে অনুরোধ করব।” সিপিএম ও এসইউসি নেতারা পাট বীজ বিলির এমন সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাদেশিক কৃষক সভার নেতা অনন্ত রায়ের বক্তব্য, “চাষিদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে তারা মহাজনের ঋণে জড়াবেন। তাই জনপ্রতিনিধিদের বদলে সরাসরি প্রশাসনের মাধ্যমে তা বিলি করা যায় কিনা সেই প্রস্তাব দেব।”
তৃণমূল পাল্টা দাবি করে বলেছে, কত জন চাষি পাট চাষ করবেন, কত জন নিয়ম মেনে উপভোক্তা তালিকায় সুযোগ পাবেন তার তালিকা করা যায় না। তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “যারা এ সব বলছেন তারা সময় মত চাষোর কাজ করতে হয় সেটা জানেন না। আগে পাট চাষের মরসুম পেরনোর পর বীজ দেওয়া হতো। বিধি সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি।”
জেলায় ফি বছর গড়ে ৫০ হাজার হেক্টর এলাকায় পাট চাষ হয়। এ জন্য ৪০০ টন বীজের চাহিদা আছে। দফতর থেকে মিনিকিট ও ভর্তুকি মিলিয়ে প্রায় দশ শতাংশ বীজ সরবরাহ করে। খোলা বাজারে ১২০-১৩০ টাকা দরে পাট বীজ বিকোচ্ছে। জেলা সার ও কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা রবিরঞ্জন ভাদুড়ির দাবি, অন্ধ্রপ্রদেশে বীজের উত্পাদন কম ও পরিবহণ ব্যয় বাড়ার প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, “কালোবাজারির ঘটনা নেই।”