দাবিপূরণে দাওয়াই অবরোধ। দশ ঘণ্টা অবরোধের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তিতে চাষি। ছবি: বাপি মজুমদার।
দশ ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধের পর দুই সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ সমস্যা মিটল। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় মালদহের রতুয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় মঙ্গলবার থেকে বোরো ধানে জলসেচ শুরু করেছেন চাষি। ফসল বাঁচাতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আন্দোলনে নেমে সমস্যা মেটায় মুখে হাসি ফুটেছে তাঁদের। সোমবার রাতে সামসি পাওয়ার স্টেশনের সঙ্গে ওই এলাকার ফিডার লাইন যুক্ত করে দেয় বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি। তার পর সকাল থেকেই মাঠে মাঠে জলসেচের জন্য চাষিদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়।
সেচের অভাবে লালচে হয়ে ওঠা বোরো ধান ফের বাঁচানোর আশায় মাঠে চাষিদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। আন্দোলনে সময় তাদের একাংশের বিরুদ্ধে যাত্রী হেনস্থা-অটো ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠার ঘটনাকে মেনে নিতে পারছেন না চাষিরা। আন্দোলনে ঢুকে কারা এমন কাজ করল তাও তারা নিজেদের মতো করে খোঁজ নিচ্ছেন বলে চাষিরা জানিয়েছেন। যদিও কারও বিরুদ্ধে হেনস্থা-ভাঙচুরের কোনও অভিযোগ কেউ জানাননি বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি উত্তর মালদহ ডিভিশন ম্যানেজার সুমিত চৌধুরী এদিন বলেন, “এলাকার সমস্যা মিটে গিয়েছে! যতদিন না ওই এলাকার ট্রান্সফর্মারের বহনক্ষমতা বাড়ানোর কাজ শেষ হচ্ছে, তত দিন সরাসরি পাওয়ার স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।”
বন্টন কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, বোরো ধান চাষের মরসুম শুরু হতেই চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় রতুয়ার চাঁদপাড়া ফিডার লাইনে সমস্যা দেখা দেয়। গত সোমবারের জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামার কথা গত রবিবার রাতেই এলাকায় মাইকে প্রচার করেন চাষিরা। সোমবার সামসি ঘাঁসিরাম মোড় ও শ্রীপুরে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীর একাংশের বিরুদ্ধে মহিলা যাত্রী হেনস্থা ও অটো ভাঙচুরের অভিযোগে পাল্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১০ ঘণ্টা পর পুলিশ-প্রশাসন ও বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ দিন সকাল থেকেই বোরোর পরিচর্য়ায় মেতে ওঠেন চাষি। পিন্ডলতলার চাষি নাজির হোসেন ধারদেনা করে ২৫ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “বোরো ধানের খেত সারাক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়। স্যালো পাম্প চালিয়ে জলসেচ করা সম্ভব নয়। তবুও দুদিন স্যালো চালিয়ে জল দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু গরমে জলস্তর নেমে যাওয়ায় ভাল জল ওঠে না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকায় আন্দোলনে নামতে হয়।” আন্ধারুর বাসিন্দা মহবুব আলম বলেন, “সমস্যা না মেটা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেই পথে বসেছিলাম। মানুষ আমাদের ভুল বুঝলেন। কারা যে উল্টো গোলমাল করল তা বুঝতেই পারলাম না।”