পেয়ারার চাষ বাড়ছে হলদিবাড়িতে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে যে হারে পেয়ারা চাষ বাড়ছে তাতে কয়েক বছরেই উত্তরবঙ্গের চাহিদার সিংহ ভাগ পূরণ করবে হলদিবাড়ির পেয়ারা। এই মুহূর্তে ফলন বেশ ভাল হচ্ছে। বর্তমানে শিলিগুড়ি, হলদিবাড়ি, ধুপগুড়ি এবং ময়নাগুড়ির বাজারে যে পেয়ারা দেখা যাচ্ছে তার প্রায় সবটাই হলদিবাড়ির পেয়ারা। উত্তরবঙ্গ ছাড়িয়ে অসমেও যেতে শুরু করেছে।
বছর দুই আগেও জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ির বাজারে এই সময় পেয়ারা দেখা যেত না। শিলিগুড়ির খুচরো বাজারে প্রতি কেজি পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা । জলপাইগুড়ির খুচরো বাজারে দাম ৬০ টাকা কেজি। হলদিবাড়িতে পাইকারি দাম এখন ৩৬ টাকা বলে চাষিরা জানিয়েছেন। বর্ষাকালে দাম নেমে হয় প্রতি কেজি ১৫ টাকা। উদ্যান পালন বিভাগের হলদিবাড়ি ব্লকের উপদেষ্টা (ফিল্ড কনসালট্যান্ট) মানস মিত্র বলেন, “হলদিবাড়িতে পেয়ারার চাষ বেড়ে চলেছে। ভবিষ্যতে উত্তরবঙ্গে ছেয়ে যাবে হলদিবাড়ির পেয়ারায়। পেয়ারা অর্থকরী ফল। পেয়ারা বিক্রি করে কৃষক লাভের মুখ দেখছেন।”
বারুইপুরের পেয়ারার চেয়ে গুণ ও মানে উৎকৃষ্ট হলদিবাড়ির পেয়ারা। উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা যায়, হলদিবাড়িতে পেয়ারার চাষ শুরু হয় ২০০৭ সালে। পরীক্ষামূলকভাবে এক কৃষক চাষ শুরু করেন। তিন বিঘায় ২১০টা গাছ লাগিয়ে পেয়ারার চাষ শুরু করেছিলেন হলদিবাড়ির বাসিন্দা সুদীপ বর্মন। প্রথম বছরে পেয়ারা ফললেও বাণিজ্যিক ভাবে তা সফল হয়নি। দ্বিতীয় বছরে তিনি বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয় তাঁর চাষ। সুদীপবাবু বলেন, “তার পরে পেয়ারার বাগান বাড়িয়েই চলেছি। উত্তরবঙ্গ ছাড়িয়ে অসমেও পেয়ারার চাহিদা আছে।” কৃষকেরা জানান, বর্ষায় হলদিবাড়ি থেকে গুয়াহাটিতেও পেয়ারা যাচ্ছে। উদ্যান পালন দফতর সূত্রে খবর, এক বিঘার একটি বাগানে সর্বোচ্চ ৭০টা গাছ লাগানো যেতে পারে। প্রতি গাছ থেকে ৫০ কেজি পেয়ারা প্রতিবার তোলা যাবে। বছরে দু’বার পেয়ারা তোলা যায়। হলদিবাড়িতে এখন ১২ জন কৃষক ৫০ বিঘা জমিতে পেয়ারার চাষ করছেন। উৎপাদিত পেয়ারার পরিমাণ বছরে ৩৫০০ কুইন্টাল।
পেয়ারা গাছ প্রথম বছর যা ফল দেয়, দ্বিতীয় বছর থেকে সেই পরিমাণ বাড়তে থাকে। চারা গাছ লাগানোর জন্য প্রথম বছরে বিঘা প্রতি খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। তার পরে খরচ তেমন কিছু হয় না। বর্ষার আগে এবং পরে দু’বার চাপান সার দিতে হয়। পোকা লাগলে গাছে জল, কীটনাশক স্প্রে করা হয়। বর্ষায় পেয়ারা তোলার পরে গাছের ডাল বেঁকিয়ে দিলে তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় বার ফল আসে। হলদিবাড়িতে ‘বারুইপুর লোকাল’ ও ‘এলাহাবাদ খাজানা’দু’রকমের পেয়ারার চাষ হয়। বারুইপুর লোকাল জাতের পেয়ারা চাষ পছন্দ করছেন কৃষকেরা। কারণ এ জাতের পেয়ারার ফলন বেশি হয়। সাইজ মাঝারি হয়। এলাহাবাদ খাজানা জাতের পেয়ারা আকারে বড় কিন্তু ফলন কম। পেয়ারা বাগানের মধ্যে অন্য সব্জি চাষ করে কৃষক বাড়তি আয় করতে পারেন বলে জানিয়েছেন হলদিবাড়ি ব্লকের কৃষি অধিকর্তা সঞ্জীব মৈত্র। তিনি বলেন, “পেয়ারা বাগানের মধ্যে আদা এবং হলুদের চাষ করে কৃষক বাড়তি আয় করতে পারেন। শীতকালীন সব্জি মটর শুটি ও বরবটি চাষ করতে পারেন তাঁরা। এ সব চাষ করে কৃষক পেয়ারা বাগানের খরচ তুলতে পারেন।” পেয়ারা চাষিদের আক্ষেপ, উত্তরবঙ্গের স্থানীয় পেয়ারা পাইকারি বাজারে দর পাচ্ছে না। কয়েক জন চাষির অভিযোগ, তাঁরা ৩৬-৪০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও খুচরো বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় চাষি সুদেব রায়ের কথায়, “আমরা ঘাম ঝরিয়ে ফলাচ্ছি। বেশি লাভ করছেন খুচরো বিক্রেতাদের একাংশ। কৃষি বিপণন দফতর কিছু একটা করুক।”
হস্টেলে ঢুকে চুরি। আলিপুরদুয়ার কলেজের মেয়েদের হোস্টেলে চুরির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল। বৃ্স্পতিবার দুপুরের পর পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। মার্চ থেকে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে নির্বাচনের জন্য বন্ধ রয়েছে। এপ্রিলের প্রথম দিকে ছাত্রীরা বাড়ি চলে যান। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শৈলেন দেবনাথ বলেন, “হস্টেলে কেউ ছিলেন না। রান্নার জিনিস, চারটি গ্যাস সিলিন্ডার চুরি হয়েছে। ছাত্রীদের কি কি জিনিস চুরি হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না।”