এক যুবককে খুনের মামলায় সোমবার মালদহের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ৪ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ওই নির্দেশের তিনদিন পরেও অভিযুক্ত পুলিশ অফিসাররা গ্রেফতার না হওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন নিহত যুবক পিকি দাসের মা। সরব হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমনিতির মালদহ শাখাও (এপিডিআর)। অভিযুক্ত ওই চার পুলিশ অফিসার আগাম জামিনে আর্জি জানিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, “এখনও আদালতের নির্দেশ হাতে পাইনি। তবে গ্রেফতারি পরোয়ানার খবর শুনেই অভিযুক্ত অলোক ভৌমিককে বামনগোলা থানার ওসি পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছি। আদালতের নির্দেশ হাতে পাওয়ার পর আইন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত চার পুলিশ অফিসারের আইনজীবী তড়িৎ কুমার ওঝা জানান, সোমবার চার পুলিশ অফিসার শিপ্রা রায়, অলোক ভৌমিক, দেবদুলাল বিশ্বাস ও দিলীপ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এর পরে তিনি ওই অফিসারদের হয়ে আগাম জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজের আদালতে আবেদন করেছেন। তড়িৎবাবু বলেন, “১৮ জুন শুনানির দিন ঠিক হয়েছে।” সহকারি সরকারী আইনজীবী দীপেন চৌধুরী জানান, আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার অর্থ, পুলিশ আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করাবে।
সিআইডি ৬ মে মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়। সোমবার মালদহের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চার পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। অভিযুক্ত চার পুলিশ অফিসারই ইংরেজবাজার থানায় কাজ করতেন। বর্তমানে বর্তমানে শিপ্রা রায় বালুরঘাটে কর্মরতা, দেবদুলাল বিশ্বাস মুশিদাবাদে কর্মরত। দিলীপ ভট্টাচার্য কয়েকদিন আগে অবসর নিয়েছেন।
মালদহ শহরের জুবলি রোজের বাসিন্দা বিধবা সন্ধ্যা দাসের একমাত্র সন্তান পিকি দাস ইংরেজবাজার থানায় বিভিন্ন অভিযোগকারীদের অভিয়োগ লিখে সামান্য টাকা উপার্জন করতেন। পিকির থানার সমস্ত পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ওই থানায় কর্মরত মহিলা সাব ইন্সপেক্ট শিপ্রা দেবীর কোয়ার্টারেও পিকি যেতেন বলে বাড়ির লোকজনদের দাবি। ২০১২ সালে মে মাসে ওই মহিলা সাব ইন্সপেক্টের কোয়ার্টার থেকে লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না চুরি হলে পিকিকে সন্দেহ করা হয়। বাড়ির লোকজনরা দাবি করেছেন, পুলিশি অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে পিকি বেশ কিছুদিন পালিয়ে ছিল। এর পর বাড়ি ফিরলে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ ২০১২-র ২৩ জুন পিকিকে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে যায়। ওই রাতেই পুলিশ হেফাজতে পিকি মারা যায়। পিকির মা ইংরেজবাজার থানার সাব ইন্সপেক্টর শিপ্রা-সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পুলিশ সিআইডিকে দেয়। সিআইডি অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত না করে গোটা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে, এই অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। সেই মামলার চার্জশিট পেশ হয়। এদিন অভিযুক্ত অভিযুক্ত অলোক ভৌমিকের দাবি, “পিকি দাসের মুত্যুর সঙ্গে আমি কোনভাবে যুক্ত নই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” বাকি তিন অভিযুক্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁদের মোবাইল বন্ধ ছিল।