বাস টার্মিনাসের পরিত্যক্ত ঘরে আলু বোঝাই ৭২টি বস্তা দেখে শনিবার সকালে উত্তেজনা ছড়াল আলিপুরদুয়ারে।
দীর্ঘদিন ধরেই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে শহরের মনোজিৎ নাগ বাস টামির্নাসের দোতলা অফিস বাড়িটি। এ দিন সকালে ওই বাড়ির একতলা ঘরে থরে থরে আলু বোঝাই বস্তা সাজানো দেখে টার্মিনাস চত্বরে ভিড় জমান বাসিন্দারা। খবর পৌঁছয় কৃষি দফতর এবং জেলা পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখায়। শাখার অফিসাররা এসে খোঁজ করলেও আলুর মালিককে পাননি বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন আলু ব্যবসায়ীকে ডেকে পাঠানো হয়। কেউই আলুর মালিকানার দাবি করেননি। দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারদের সন্দেহ, টামির্নাসের পরিত্যক্ত ঘরে মজুত করে অসমগামী বাসে একটি-দু’টি করে বস্তা চাপিয়ে পাচার করার পরিকল্পনা ছিল। আলিপুরদুয়ার এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর পারিজাত সরকার জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে তাঁদের অনুমান, এ দিন ভোরে ছোট গাড়ি করে কোচবিহার জেলার কোনও এলাকা থেকে আলুর বস্তা এনে বাস ওই ঘরে মজুত করা হয়।
তবে আলুর মালিকানা কেউ স্বীকার না করায় ওই বস্তাগুলি বাজেয়াপ্ত করেছে কৃষি বিপণন দফতর। আলিপুরদুয়ার জেলার সহকারি কৃষি অধিকর্তা অরূপকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে আমরা মনোজিৎ নাগ বাস টার্মিনাসে অভিযান চালাই। সেখানে পরিত্যক্ত অফিস ঘরে আলু মজুত করা ছিল।” এমনিতেই অসম-সহ ভিন্রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ থাকায় বাসে একটি বা দু’টি করে বস্তা চাপিয়ে কয়েক দফায় তা অসমে পৌঁছে দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গ হিমঘর মালিক সংগঠনের উত্তরবঙ্গ শাখার আলিপুরদুয়ার ইউনিটের সম্পাদক শিশির দাস জানান, গত ১১ অগস্ট থেকে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে বর্তমানে ১ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। শিশিরবাবুর অভিযোগ, ‘‘ভিন্ রাজ্যের কিছু ব্যবসায়ী কোচবিহার-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আলু সংগ্রহ করে বাসে করে অসম নিয়ে যাচ্ছে।” শনিবারের এই ঘটনার পরে অসমগামী বাসেও তল্লাশি চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন মোট ৩৬ কুইন্টাল আলু বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আজ, রবিবার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তা এলাকার নিউ মার্কেটে সরকারি ১৪ টাকা কিলো দরে বিক্রি করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। আলিপুরদুয়ার বড়বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক পুলক মিত্র বলেন, “কৃষি বিপণন দফতর থেকে ন্যায্য মূলে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। রবিবার থেকে বাজারে ১৪ টাকা কিলো দরে আলু পাবেন ক্রেতারা।’’
এ দিকে, উত্তরবঙ্গের সব বাজারেই আলুর দামের উপর নজরদারি চলছে বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। নানা অভিযোগে বাজেয়াপ্ত করা আলু উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়ে গৌতমবাবু বলেন, “সরকারের অনুরোধে আলু ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট তুলে নিয়েছেন। যতটা কম দামে আলু বিক্রি হয় তার চেষ্টাও করছেন তাঁরা।” তাঁর দাবি, উত্তরবঙ্গের বাজারে আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। যদিও শনিবারও শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ির বেশ কিছু বাজারে ২২ থেকে ২৪ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। মন্ত্রীর আশ্বাস, খুচরো বাজারেও নজরদারি চলায় পরিস্থিতি দ্রুত স্থিতিশীল হবে।