আগুনের গ্রাসে। মঙ্গলবার রতুয়ায় বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর উত্তরবঙ্গের দুটি প্রান্তে আগুন লেগে এক মহিলার মৃত্যু-সহ শতাধিক বাড়ি ছাই হয়েছে। মহিলার মৃত্যুর ঘঠনাটি ঘটে সোমবার রাতে হাসিমারার একটি বস্তিতে। আর মঙ্গলবার দুপুরে অপর ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের রতুয়ায়। প্রথম ঘটনায় চারটি বাড়ি পুড়ে গেলেও মালদহের ঘটনায় পুড়েছে ১০০ উপর বাড়ি। দমকল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হাসিমারায় ওই বস্তিতে স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন তাঁর স্বামীও। জখমকে আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, প্রথমে এক ঝুপড়িতে আগুন লাগে। দ্রুত চারটি বাড়ি পুড়ে যায়। বাড়ি থেকে বেরোতে গিয়ে সুরজকলা মাহাতো (৩২) নামের ওই মহিলা অগ্নিদগ্ধ হন। তাঁর স্বামী রাম সহায় মাহাতো স্ত্রীকে ঘর থেকে বার করতে জখম হন। বাসিন্দারা দু’জনকে কোনও ক্রমে ঘরের বাইরে বার করেন। ঘটনাস্থলে ওই মহিলার মৃত্যু হয়। রামসহায়কে আলিপুরদুয়ার হাসাপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বস্তির একটি বাড়িতে দুই ড্রাম ডিজেল মজুত করে রাখা ছিল। সেখান থেকে প্রথমে আগুন লাগে। হাসিমারা দমকল কেন্দ্রে খবর দেওয়ার পাশাপাশি বাসিন্দারা আগুন নেভানোর কাজে নামেন। আধ ঘণ্টার মধ্যে দমকল কর্মীরা দুটি ইঞ্জিন নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ছাইয়ের গাদা থেকে আগুন ছড়িয়ে ছাই হয়ে গেল ১২০ বাড়ি। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে মালদহের রতুয়া-১ ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুর এলাকায়। দমকল যাওয়ার আগে বাসিন্দারাই স্যালো পাম্পসেট চালিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। প্রবল হাওয়ায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ১২০টি বাড়ি। পরে চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে দমকলের দুটি ইঞ্জিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ঘরবাড়ি-সহ ধান, চাল, গম, টাকা খুঁইয়ে খোলা আকাশের নীচে ৫০ পরিবারের শ’দুয়েক মানুষ।
দুপুরে ওই অগ্নিকান্ডের পর সর্বস্ব হারিয়ে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া। আগুন নেভানোর সময় বেশ কিছু বাসিন্দার টাকা ও জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার মতোও অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পরই এলাকায় যান রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও নীলাঞ্জন তরফদার, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সহ রাজনৈতিক দলের নেতারা। চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে বলেন, “দ্রুত দুর্গতদের তালিকা করে তাদের ত্রাণ দেওয়া হবে। নির্বাচন বিধি বলবৎ থাকায় সরকারি কর্মীদের দিয়েই ত্রাণ বিলি করা হবে।”
এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় মণ্ডলের বাড়ির এক পাশে ছাইয়ের গাদা থেকে আগুন হাওয়ায় গিয়ে পড়ে তাঁর বাড়ির খড়ের চালায়। অধিকাংশ বাড়িই মাটির ও মাথায় খড় ও টিনের চালা। ফলে নিমেষে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষিজীবী ও দিনমজুর। গম কাটার মরসুম হওয়ায় দুপুরে গ্রামে পুরুষ ছিল না বললেই চলে। এলাকার পাশে এ দিন বালুপুরে সাপ্তাহিক হাট বসে। হাটের লোকজন সহ লাগোয়া বাণীকান্তটোলা থেকেও ছুটে এসে বাসিন্দারা স্যালো চালিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকেন। পরে দমকল গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে বিকেল গড়িয়ে যায়।
সুকেশ যাদব বলেন, “শোওয়ার ঘর, রান্না ঘর, গোয়াল ঘর মিলিয়ে ৫০টি পরিবারের শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। দুর্গতরা অধিকাংশই গরিব। যাতে দুর্গতেরা ত্রাণ পান সেই জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।”