প্রয়াত নেতার জন্মদিনে আবেগে ভাসল ছিটমহল

প্রয়াত নেতা দীপক সেনগুপ্তের জন্মদিনকে ঘিরে আবেগে ভাসল ছিটমহল। কেউ নেতার ছবিতে মালা দিয়ে চোখের জল মুছলেন। কেউ মজলেন স্মৃতিকথায়। মশালডাঙা, পোয়াতের কুঠি, বাত্রীগছ বা করলা, ছবিটা ছিল সর্বত্রই এক। “দীপকবাবু বেঁচে থাকলে আজ সব চেয়ে বেশি খুশি হতেন।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩৬
Share:

উদ্‌যাপিত হচ্ছে দীপক সেনগুপ্তের জন্মদিন। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

প্রয়াত নেতা দীপক সেনগুপ্তের জন্মদিনকে ঘিরে আবেগে ভাসল ছিটমহল। কেউ নেতার ছবিতে মালা দিয়ে চোখের জল মুছলেন। কেউ মজলেন স্মৃতিকথায়। মশালডাঙা, পোয়াতের কুঠি, বাত্রীগছ বা করলা, ছবিটা ছিল সর্বত্রই এক। “দীপকবাবু বেঁচে থাকলে আজ সব চেয়ে বেশি খুশি হতেন।”

Advertisement

কে দীপক সেনগুপ্ত? ১৯ বছর ধরে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে গড়ে তুলেছিলেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটি। প্রয়াত সাংসদ অমর রায় প্রধান, সৌমেন দাসদের সঙ্গে ছুটে বেরিয়েছেন এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে। লক্ষ্য ছিল ছিটমহলের বাসিন্দাদের মুক্তি। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই সংগঠনের সহকারি সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরই ছেলে দীপ্তিমানবাবু। সম্প্রতি ছিটমহল বিনিময় নিয়ে সরকারি স্তরে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটিতে স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল অনুমোদন করা হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিলটি নিয়ে ইতিবাচক রিপোর্ট জমা দিয়েছে লোকসভায়। যে কোনওদিন রাজ্যসভায় পেশ হতে পারে ওই বিল। ৪ ডিসেম্বর দিনহাটার ছিটমহল সংলগ্ন নয়ারহাটে জনসভা করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত এই বিল সমর্থনের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না নিলেও দিনহাটার সভামঞ্চ থেকে তিনি কোনও বার্তা দেবেন বলে আশা ছিটমহলের বাসিন্দাদের। এমন একটা সময়ে দীপকবাবুর না থাকাটা মানতে পারছেন না আন্দোলনকারীরা।

কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত ভূখণ্ড ঘেরা বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহল রয়েছে। বাংলাদেশ ভূখন্ড ঘেরা ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। লোকসংখ্যা ৫২ হাজারের মতো। স্বাধীনতার পর থেকে ওই বাসিন্দারা ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন কোনও রক্ষাকবচই কোনও দিন পাননি এঁরা। এই নিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে আওয়াজ উঠতে শুরু করে ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকেও। দীপকবাবু ফরওয়ার্ড ব্লকের সূত্রে ওই আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। একটা সময় তিনি অনুভব করেন, কোনও একটি রাজনৈতিক দলে থেকে দাবি আদায় সম্ভব নয়। তাঁর উদ্যোগে ১৯৯৪ সালে গড়ে ওঠে ছিটমহল বিনিময় কমিটি। ছুটে বেরিয়েছেন এক ছিটমহল থেকে আরেক ছিটমহলে। এক সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী থেকে শুরু করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সবার কাছেই দরবার করেছেন। পোয়াতের কুঠির বাসিন্দা মঞ্চুর মিয়াঁ জানান, তাঁর বাড়িতে একবার ডাকাত পড়েছিল। সব লুঠ হওয়ার পরে কাকে জানাবেন দিশা পাচ্ছিলেন না। তিনি বলেন, “পুলিশ আমাদের এলাকায় আসে না। এখানে কোনও আইন নেই। দীপকবাবুকেই সব জানাই। তিনি আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।” ১৯৯২ সালে মশালডাঙা ছিটমহলে আগুনে ২২ টি বাড়ি পুড়ে যায়। দু’ জন মারা যান। পুলিশ যেতে চায়নি। এলাকার বাসিন্দা আজগর আলি বলেন, “দীপকবাবু তখন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বেঁচে যাই আমরা।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement