মেয়র এবং মেয়র পারিষদেরা ইস্তফা দেওয়ার পরে দু’মাস কাটলেও কেন সরকারি ভাবে পুরবোর্ড ভাঙা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল সিপিএম। দলের পক্ষে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য জানান, পুরসভার মেয়রের ইস্তফার দেওয়ার পর রাজ্যের পুর দফতর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার কথা। পুর-আইনের ৬০/৬১ ধারা অনুসারে সেখানে পুরবোর্ড ‘অদক্ষ এবং অযোগ্য’ বলে জানিয়ে তা ভেঙে দেওয়ার কথা বলতে হয়।
অশোকবাবুর কটাক্ষ, “তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার নিজেদের দলের ব্যর্থতা স্বীকার করতে লজ্জা পাচ্ছে। পুরবোর্ডের ক্ষমতায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলও ছিল। তাই টালবাহানা চলছে। ভোট এলে বাসিন্দাদের ওই প্রশ্নের জবাবও তৃণমূল দিতে পারবে না।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর অভিযোগ, শহরের রাস্তাঘাট, নিকাশি এবং জঞ্জাল অপসারণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া অশোকবাবুর আরও অভিযোগ, “কোনও সরকারি নির্দেশিকা ছাড়াই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব পুরবোর্ডের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করছেন। উনি একজন কাউন্সিলরও। তার পরেই বেআইনিভাবে উনি বোর্ডের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছেন।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “অশোকবাবুদের কোনও বক্তব্যের জবাব আমি দেব না।”
১ অক্টোবর শিলিগুড়ি পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। পুর নিয়ম মেনে ওই দিনের ছয় মাসের আগের সময়ের মধ্যে পুরভোট করার কথা। ২০০৯ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে পুরবোর্ডে ক্ষমতায় আসে। ৪৭ আসনের মধ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের দখলে যায় ৩০ আসন। তার পরে একাধিকবার মেয়র, ডেপুটি মেয়র এবং চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দুই দলের টানাপোড়েন হয়। বোর্ড থেকে তৃণমূল বার হয়ে আসলেও কয়েকটি বরো কমিটি দখল এখনও তৃণমূলের হাতে রয়েছে। এর পর গত ২০ মে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত সপার্ষদ পদত্যাগ করেন। কমিশনার বোর্ড দেখভাল করছেন।
জেলা সিপিএম নেতা অশোকবাবু, কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকারদের অভিযোগ, “মানুষের কাছে নতুন করে ভোট চাওয়ার কোনও মুখ তৃণমূল বা কংগ্রেসের নেই। শিলিগুড়ি শহরকে পাঁচ বছরে পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা চাইছি দ্রুত ভোট হোক। মানুষ তাতেই সমস্ত জবাব দেবেন বলে আমাদের আশা।”
দলীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে সিপিএমের তরফে ভোট নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার সভার, কনভেনশন এবং পথসভা শুরু করে দেওয়া হয়েছে। দলীয় স্তরে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে। আগামী ১৮ জুলাই শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলাশাসকের মাধ্যমে ভোটের দাবিতে চিঠি পাঠানো হচ্ছে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকেও। অশোকবাবু বলেন, “আমরা লোকসভা ভোটে শহরে খারাপ ফল করেছি ঠিকই। মানুষ আমাদের ভোট দেয়নি বলেও জানিয়েছি। যে সভা, কনভেনশন চলছে, সেখানে নতুন করে বহু মানুষ আসছেন। এই বার পুরসভার ভোটে তাঁরা পাশে আছেন বলে জানাচ্ছেন।”
বসে নেই তৃণমূল বা বিজেপিও। শাসক দলের মন্ত্রী গৌতমবাবু সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন পাড়া, বস্তি, কলোনি এলাকায় ঘোরা শুরু করেছেন। এ দিন বিষয়টি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন অশোকবাবু। তিনি বলেন, “মন্ত্রীর গোটাটাই প্রচার ছাড়া কিছুই নয়। এর কোনও বাস্তবিকতা নেই।” বিষয়টি শোনার পর অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “আমি কোথায় যাচ্ছি, কী করছি তা নিয়ে অশোকবাবুদের ভাবতে হবে না। আর উনি কি আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়ান, যে কী করি তা নিয়ে মন্তব্য করছেন।”
দাবি। শিলিগুড়ি মহকুমার চা বাগানে জঙ্গলমহলের ধাঁচে রেশন ব্যবস্থা চালুর দাবিতে রাজ্য সরকারের খাদ্য সরবরাহ বিভাগে চিঠি পাঠাল শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ। ০পরিষদের সহ সভাধিপতি আইনুল হক বলেন, “প্রতি পরিবারে সপ্তাহে ২ কেজি চাল ১ কেজি গম দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। শ্রমিকরা ৫০০ গ্রাম আটা পায়। বদলে গমের দাবি জানানো হয়।”