এ বার মার্কিন মুলুকে শাখা খুলল ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় প্রবাসী সমন্বয় কমিটি।
সংগঠন সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক স্তরে ছিটমহল বিনিময়ের দাবির সপক্ষে জোরালো জনমত গড়ে তোলার ভাবনা থেকেই আমেরিকার সল্টলেক সিটির এক দল প্রবাসী ভারতীয় এটি তৈরিতে উ্যদোগী হন। কমিটির দফতর করা হয়েছে সল্টলেক সিটির বাসিন্দা এক সদস্যের বাড়িতে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কমিটির উদ্যোগে ওই শহরে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ও হিন্দিতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সংসদে চলতি বাজেট অধিবেশনে ছিটমহল বিনিময়ে স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল পেশ করা না হলে, নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদর দফতরের সামনে মে মাস নাগাদ বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা।
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ছিটমহল বিনিময়ের দাবি জোরাল করতে আমেরিকায় আমাদের শাখা সংগঠন তৈরি হওয়ায় প্রবাসী বাঙালিদের কাছে ওই সমস্যা তুলে ধরার বড় সুযোগ তৈরি হল। দ্রুত ছিটমহল বিনিময়ের অগ্রগতি না হলে সংগঠনের সদস্যরা নিউইয়র্কে রাস্ট্রসঙ্ঘের সদর দফতরের সামনেও বিক্ষোভ আন্দোলনের কর্মসূচির নেবেন।”
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তথ্যচিত্র নির্মাতা প্রবাসী বাঙালি অনামিকা বন্দোপাধ্যায়কে আহ্বায়ক করে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় প্রবাসী সমন্বয় কমিটির কাজ শুরু হয়েছে। সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন শ্রীনিবাসন রঘুরমন, লিপিকা সালেয়া, মধুমিতা ভট্টাচার্যের মতো একাধিক বিজ্ঞানী। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে সমালোচক হিসাবে পরিচিত মরিয়ম বেনজ স্বতস্ফূর্ত ভাবে সংগঠনের সদস্য হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়েছে। কানাডার এক বাসিন্দার এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুতের সঙ্গেও কমিটির কর্তাদের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্তের দাবি, “কানাডাতেও একই রকম ভাবে সংগঠনের শাখা খোলার ব্যাপারে রুবিনা আখতার আগ্রহ দেখিয়েছেন। সেটা করা গেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদেরও সঙ্গে পাওয়া যাবে।”
কমিটির কর্তারা জানান, ২০০৮ সালের মার্চ মাসে তথ্যচিত্র তৈরির বিষয়ে খোঁজখবর নিতে অনামিকা বন্দোপাধ্যায় প্রথম বার ছিটমহলে আসেন। শেষ বার তথ্যচিত্র তৈরির কাজে মশালডাঙা ছিটমহলে এসেছিলেন বছর খানেক আগে। গত বড় দিনের আগে বাংলাদেশি ছিটমহল মশালডাঙার কচিকাঁচাদের জন্য তিনি কেক পাঠানর বন্দোবস্তও করেন। কোচবিহারের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বড়সড় কেক তৈরির অর্ডারের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ‘অনলাইনে’ ২৫৩০ টাকা পাঠিয়ে দেন অনামিকা দেবী। এ দিন সল্টলেক সিটি থেকে ফোনে অনামিকা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “ছবি তৈরির কাজে একাধিক বার ছিটমহলে গিয়েছি। ওখানকার বাসিন্দাদের সমস্যা ভীষণ প্রভাবিত করেছিল। মাঝে মাঝেই ওই বাসিন্দাদের কথা মনে পড়ে। ওদের পাশে থাকার বার্তা দিতে ওই সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ছিটমহল বিনিময়ের দাবি ছড়িয়ে দিতে চাইছি।”
ভারত-বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। কোন দেশের নাগরিত্ব না থাকায় ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাগরিক পরিষেবাও মেলে না বলে অভিযোগ। দু’দেশের ছিটে ৫১ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।