প্রকল্পে দুর্নীতি, অভিযুক্ত প্রাক্তন বাস্তুকার

মহানন্দা নিকাশি প্রকল্পে দু’টি পাম্প হাউজ তৈরির কাজে ৩ কোটি টাকারও বেশি নয়ছয়ের যে মামলা হয়েছে, তাতে মূল অভিযোগের তির শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ‘ইলেক্ট্রিকাল’ বিভাগের তত্‌কালীন বাস্তুকার জ্যোতির্ময় মজুমদারের দিকে। ২০১২ সালে ওই কাজ হয়। শিলিগুড়ি পুরসভার বিদ্যুত্‌ বিভাগে এক সময় কাজ করতেন জ্যোতির্ময়বাবু।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৫
Share:

মহানন্দা নিকাশি প্রকল্পে দু’টি পাম্প হাউজ তৈরির কাজে ৩ কোটি টাকারও বেশি নয়ছয়ের যে মামলা হয়েছে, তাতে মূল অভিযোগের তির শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ‘ইলেক্ট্রিকাল’ বিভাগের তত্‌কালীন বাস্তুকার জ্যোতির্ময় মজুমদারের দিকে। ২০১২ সালে ওই কাজ হয়। শিলিগুড়ি পুরসভার বিদ্যুত্‌ বিভাগে এক সময় কাজ করতেন জ্যোতির্ময়বাবু। তাঁকে এসজেডিএ-র দফতরে আনা হয়েছিল বাম জমানাতেই। এসজেডিএ-র একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই আধিকারিকের সময়ই মহানন্দা নিকাশি প্রকল্পে নৌকাঘাট এবং ফুলবাড়িতে ওই দু’টি পাম্প হাউজ তৈরির পরিকল্পনা হয়। ওই প্রকল্পের পরে ২০১২ সালে তিনি দীর্ঘ ছুটি নিয়ে চলে যান। দফতরের অন্যান্য আধিকারিকরা জানতেন, বিদেশে তিনি চাকরির জন্য গিয়েছেন। জ্যোতির্ময়বাবুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ।

Advertisement

তাঁর সময়ে করা ওই দু’টি পাম্প হাউজ তৈরির প্রকল্পে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প মেশিন নকশায় উল্লেখ করে প্রকল্পের ব্যয় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেখান হয় বলে অভিযোগ। অডিট রিপোর্টে সে ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করাও হয়েছে। তা ছাড়া নগরোন্নয়ন দফতরের তরফেও এ ব্যাপারে অভিযোগ পৌঁছয়। সেখান থেকেও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প কেনার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করা হয়েছিল। অভিযোগ, হাতে লেখা কোটেশনের মাধ্যমে কলকাতার একটি সংস্থাকে ওই কাজ দেওয়া হয়েছিল। ওই সংস্থা যন্ত্রাংশ সরবরাহ বা কাজ সম্পূর্ণ করেনি। অথচ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ কাগজে কলমে কাজ হয়ে গিয়েছে দেখিয়ে তিন দফায় ৩ কোটি টাকারও বেশি ওই ঠিকাদার সংস্থা ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোকে মিটিয়ে দেয় বলে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে এসজেডিএ-র তরফে।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডিএ চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের কাউকেই ছাড়ার প্রশ্ন নেই। অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতেই অভিযোগ জানানো হয়েছে।” এমনকী জ্যোতির্ময়বাবুর যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বাম জমানায় কী ভাবে এসজেডিএ-র মতো দফতরে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও বর্তমান কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুলেছেন। কী ভাবে তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এসজেডিএ সূত্রের খবর, এই সব প্রকল্পের কাজে অনিয়মের পরই ওই বাস্তুকার দীর্ঘমেয়াদী ছুটিতে বাইরে চলে যান। নিজের জায়গায় কৌশলে তাঁরই ভাগ্নে সপ্তর্ষি পালকে দফতরের দায়িত্বেও বসান বলে অভিযোগ। এসজেডিএ-র একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, সপ্তর্ষিবাবুর ইন্টারভিউ বোর্ডে জ্যোতির্ময়বাবু নিজেও ছিলেন।

Advertisement

মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি, বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর মতো বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি যে ৮ টি অভিযোগ এসজেডিএ’র তরফে পুলিশে জানানো হয়েছিল তার তদন্তে নেমে পুলিশ সপ্তর্ষি পালকে গ্রেফতার করে। ওই সমস্ত বিভিন্ন কাজের দায়িত্বও কলকাতার ওই সংস্থা ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোকে দেওয়া হয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেফতার করে ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোর কর্মধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ছেলেকে। গ্রেফতার করা হয় মৃগাঙ্ক মৌলি সরকার, প্রবীণ কুমার নামে এসজেডিএ-র আরও দুই বাস্তুকারকে। কিন্তু জ্যোতির্ময়বাবুর সময়ে নিকাশি প্রকল্পে পাম্প হাউজ তৈরির দুর্নীতির বিষয়টি এতদিন পর্যন্ত চাপা পড়েছিল।

এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ মনে করছেন দুর্নীতির শুরু জ্যোতির্ময়বাবুর সময় থেকেই। দফতরের ওই বাস্তুকারদের সঙ্গে ঠিকাদার সংস্থার যোগসাজশেই ওই দুর্নীতি হয়েছে বলেই কর্তৃপক্ষ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা এসজেডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “কোনও আধিকারিককে যে কোনও সময়ে নিয়োগ করা যেতেই পারে। কিন্তু বাম জমানাতে কোনও দুর্নীতি হয়নি। যে আধিকারিকের দিকে দুর্নীতি আঙুল উঠছে, তাতে সেই কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এই সরকারের আমলেই। ওই আধিকারিককে অবিলম্বে গ্রেফতার করা দরকার।” তা ছাড়া অডিট রিপোর্টে দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও এতদিন তা জানানো হয়নি কেন তা নিয়েও সরব হয়েছেন বিরোধীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement