ছাড় মিলল পুনাসাংচু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের। উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা, বিশেষত আলিপুরদুয়ার জেলা, ভুটানের ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বন দফতরের আপত্তিতে এত দিন ওই প্রকল্পের সুফল উত্তরবঙ্গে প্রবেশের ক্ষেত্রে অন্তরায় ছিল।
মঙ্গলবার বন দফতরের বন্যপ্রাণ বোর্ড সদস্যদের অনুমতিক্রমে অন্তত প্রাথমিক ছাড়পত্র মিলল প্রকল্পটির। এ বার অপেক্ষা, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক এবং শক্তিমন্ত্রকের সম্মতি। যা মিললে, আলিপুরদুয়ার এলাকায় পুনাসাংচু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ বণ্টন শুরু করবে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম। নিগম সূত্রে এমনই জানানো হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম ধাপে, ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে ওই প্রকল্প থেকে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পের জন্য বিদ্যুতের টাওয়ার বসানো নিয়ে আপত্তি ছিল বনকর্তাদের। তাঁদের যুক্তি ছিল, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যুৎবাহী টাওয়ার বসালে হাতিদের চলাচলের পথে তা বিপদ বয়ে আনতে পারে। এ দিনের বৈঠকে জানানো হয়েছে, বক্সা জঙ্গলের মাত্র ৩.১৫ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দিয়ে ওই বিদ্যুৎবাহী তার যাবে। যে জন্য ওই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটা হবে না বলেও শর্ত আরোপ করে ছিলেন বন্যপ্রাণ বোর্ড সদস্যরা। এ দিন সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা মেলায় ওই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন জানান। তিনি জানান, মূলত বনবস্তি এবং নদীর কোল ঘেঁষেই ওই টাওয়ার বসানো হবে। তবে বোর্ড সদস্যদের অনেকেই মনে করেন, তা সত্ত্বেও হস্তি-পথ বা হাতিদের করিডর ক্ষুন্ন হবে।
আপত্তি উঠেছিল সেবক-রংপো রেল লাইন পাতার কাজেও। তবে এ দিন সে ব্যাপারেও ছাড়পত্র মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। সিকিমগামী এই রেলপথও অবশ্য জঙ্গর ফুঁড়েই যাবে। সে ক্ষেত্রে রেল পথে ফের হস্তী-হনন সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বলেই বন কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা। এ ব্যাপারে বোর্ড সদস্যরা সরেজমিন সে সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার পরেই চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে।
তবে সুন্দরবনের মতোই আলিপুরদুয়ার জেলাকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ গড়ে তোলার সিদ্ধান্তের প্রশ্নে সর্বসম্মতিক্রমেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিনয়বাবু বলেন, “আলিপুরদুয়ারের মতো এতো সবুজ রাজ্যের আর কোনও জেলা নয়। তাই রাজ্যের দ্বিতীয় বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসেবে এই জেলাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।” এ দিন আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের প্রস্তাব মেনে লাটাগুড়িতে একটি প্রাণী হাসপাতাল গড়ার ব্যপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ময়ূরঝর্ণা হস্তী প্রকল্প খাতে দীর্ঘ দিন ধরেই কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পেয়ে আসছিল বন দফতর। তবে প্রকল্পটির নিদিষ্ট এলাকা কিংবা প্রকল্পের দায়িত্বে কে ছিলেন, তা নিয়ে বন দফতরের কাছে কোনও স্পষ্ট উত্তর ছিল না। এ দিনও সে ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট ধারনা দিতে পারেননি বোর্ডের অতিথি চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি অবশ্য বোর্ডের সম্মতিতে ময়ূরঝর্না নামে বন দফতরের একটি আলাদা ডিভিশন ঘোষণা করে দিয়েছেন। ঘোষণা করা হয়েছে, সুন্দরবনের জম্বু দ্বীপে হরিণ প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলার। রাজ্যের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা কিংবা হরিণ গবেষণা কেন্দ্র থেকে হরিণ এনে ওই দ্বীপে তাদের প্রজনন করা হবে। তারপরে সুন্দরবনের বিভিন্ন রেঞ্জে তাদের পুনর্বাসন করা হবে মূলত ‘দক্ষিণ রায়ের’ খাদ্য হিসেবে।