পেটাই হবে, মিছিলে হুমকি

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে। স্লোগান শুনে তটস্থ গ্রামের চৌপথি এলাকা। চাপা গুঞ্জন, ‘গরম মিছিল আসছে’। মিছিলে থাকা কর্মী সমর্থকদের বেশির ভাগের হাতেই লাঠি। কয়েকটি লাঠির মাথায় দলের ঝান্ডা লাগানো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০২:০২
Share:

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে। স্লোগান শুনে তটস্থ গ্রামের চৌপথি এলাকা। চাপা গুঞ্জন, ‘গরম মিছিল আসছে’। মিছিলে থাকা কর্মী সমর্থকদের বেশির ভাগের হাতেই লাঠি। কয়েকটি লাঠির মাথায় দলের ঝান্ডা লাগানো। স্লোগানে সব বিরোধীর ‘ধোলাই হবে পেটাই হবে’ বলে হুমকি। দিনহাটার শালমারা, নাজিরহাট, তুফানগঞ্জের নাটাবাড়ি, বক্সিরহাট, চিলাখানা, দেওচড়াই, বালাভূত, কোচবিহার সদরে মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জের গ্রামে এখন ফি সন্ধ্যায় ‘গরম মিছিল’ শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। লোকসভা ভোটের আগে শাসক দল তৃণমূল এবং বিরোধী বাম দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই মিছিল করে আতঙ্ক তৈরির অভিযোগ উঠেছে। দু’পক্ষই বিরোধীদের নামে পাল্টা অভিযোগও করেছে। আতঙ্ক ছড়াতে মূলত বাজার এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেই এই মিছিল বেশি হচ্ছে।

Advertisement

কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “অনুমতি না নিয়ে মিছিল করা যাবে না বলে সর্বদল বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “এমন মিছিল নিয়ে অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা হবে। নজরদারি চালানো হচ্ছে।”

কোচবিহার জেলার গ্রামগুলিতে ‘গরম মিছিল’ ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাইক মিছিল বা প্ররোচনা তৈরি হতে পারে এমন সব ক্ষেত্রেই নির্বাচন কমিশন কড়াকড়ি করলেও, গরম মিছিল বন্ধ হয়নি। ভোটের আগে নিজেদের শক্তি জাহির করতেই ডান-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নেতৃত্বে মিছিলগুলি সংগঠিত হয় বলে অভিযোগ। তবে লোকসভা ভোটের আগে যুযুধান সব দলই মিছিলের কথা অস্বীকার করে বিপক্ষের দিকে অভিযোগ তুলেছেন। দিনহাটা, তুফানগঞ্জ কোচবিহার সদরে শাসকদলের বিরুদ্ধে এই গরম মিছিল করার অভিযোগ থাকলেও, চ্যাংরাবান্ধা মাথাভাঙা, ফুলবাড়ি ঘোসকাডাঙা এবং মেখলিগঞ্জে বামেদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তমসের আলি বলেন, “জেলার সর্বত্র ছোট বাজার, হাট ও জনবহুল এলাকায় প্ররোচনামূলক স্লোগান দিয়ে তৃণমূল আতঙ্ক ছড়াতে চায়। তুফানগঞ্জে ওই প্রবণতা বেশি। পুলিশকে সব জানিয়েছি, নির্বাচন কমিশনেও ফাক্স পাঠানো হবে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, ‘ধোলাই হবে, পেটাই হবে’ স্লোগান দিয়ে তৃণমূলের দুটি মিছিলের কথা পুলিশকে জানিয়েছি। এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানোর প্রবণতা বন্ধ করা দরকার।”

‘গরম মিছিল’ বামেদের সংস্কৃতি বলে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেছেন, “লাঠি নিয়ে মিছিল করে অন্যকে হুমকি দেওয়া বাম-সংস্কৃতি। জেলার নানা এলাকায় সে ধারা বজায় রাখছেন বামপন্থীরা। আমাদের মিছিলে উন্নয়নের ইস্যু ভিত্তিক স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, ওরাই মারধরের কথা বলে।”

এই ব্যাপারে বিজেপি-র জেলা সম্পাদক নিখিল দে বলেছেন, “আগে বামেদের ‘গরম মিছিল’ বেশি হত, আর এখন তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যার দিকে এগিয়ে।” কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী কেশব রায়ের অভিযোগ, “বামদের জামা পরে যারা এ সব করত, তারা এখন তৃণমূলের পোশাক পরে ‘গরম মিছিল’ করছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement