পোকার হানায় ক্ষতির আশঙ্কা আমে

ফের সমস্যায় পড়েছেন মালদহের আমচাষিরা। এ বার আমচাষিদের ঘুম কেড়েছে শোষক পোকা। প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে ওই পোকার হানা আমচাষিদের মাথায় হাত পড়ার উপক্রম। কারণ, ওই পোকার হানায় মুকুলের রস নষ্ট হয়ে যায়। মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়ে।

Advertisement

পীযূষ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫২
Share:

পোকার হানায় ক্ষতিগ্রস্ত আম গাছের পাতা, মুকুল। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

ফের সমস্যায় পড়েছেন মালদহের আমচাষিরা। এ বার আমচাষিদের ঘুম কেড়েছে শোষক পোকা। প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে ওই পোকার হানা আমচাষিদের মাথায় হাত পড়ার উপক্রম। কারণ, ওই পোকার হানায় মুকুলের রস নষ্ট হয়ে যায়। মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়ে। আমগাছের পাতাও কালো হয়ে যাচ্ছে। ইংরেজবাজার থেকে রতুয়া, কালিয়াচক থেকে হবিবপুর সর্বত্রই একই দৃশ্য।

Advertisement

তবে শোষক পোকা আমবাগানে হানা দেওয়ার জন্য আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীদেরই দায়ী করেছেন জেলার সহ উদ্যান পালন অধিকর্তা রাহুল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এ বার যেভাবে শোষক পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে তাতে জেলায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন আম নষ্ট হতে পারে। আমের মুকুল বের হওয়ার অনেক আগে থেকেই দফতরের পক্ষ থেকে জেলার আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীদের শোষক পোকার হাত থেকে আমের মুকুলকে বাঁচাতে কিছু কীটনাশক স্প্রে করতে বলা হয়েছিল। বেশির ভাগ আমচাষীরা আমাদের পরামর্শ মেনে আমগাছে স্প্রে করেছেন। কিন্তু, ৩০ শতাংশ আমচাষি, আম ব্যবসায়ীরা তা করেননি বলে শোষক পোকা হানা দিয়েছে।

যে বাগানে শোষক পোকার আক্রমণ হয়েছে সেই বাগানের সব আম নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বলেন, “আমাদের পরামর্শ মেনে সমস্ত আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীরা গাছে কীটনাশক ব্যবহার করলে ভাল হতো। তা হলে শোষক পোকার আক্রমণে জেলায় বিপুল পরিমাণে আমের উৎপাদন মার খেত না।”

Advertisement

প্রতি বছর অল্পবিস্তর শোষক পোকার হানায় বেশ কিছু আমগাছের ক্ষতি হয়। তাই উদ্যানপালন দফতরের পক্ষ থেকে বছরে শুরুতেই জেলার আমচাষিদের পাইরিফ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, “বছরের পর একই ধরনের কীটনাশক আমগাছে স্প্রে করার ফলে শোষক পোকা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে। ফলে এই জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করা ফলে শোষক পোকা দমন করা তো দূরের কথা, উল্টে শোষক পোকা একের পর এক আমের গাছ নষ্ট করছে।”

মালদহ ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুবোধ মিশ্র জানান, জেলার আম ব্যবসায়ীদের অনেকে নিজের আমবাগানে ভালো কীটনাশক স্প্রে করান। কিন্তু যে আম ব্যবসায়ীরা অন্যের আমবাগান কিনে আমের ব্যবসা করছেন, তাঁরা অনেকে সস্তার রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে করছেন। সে জন্যই শোষক পোকার আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে বলে উদ্যান পালন দফতরের মত।

আমের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শোষক পোকা মুকুলের ভিতরের মধু শোষণ করে নেয়। এর ফলে মুকুল শুকনো হয়ে ঝরে পড়ে যায়। শোষক পোকা থেকে আঠালো মধুর মতো চটচটে জিনিস বের হয়। যে আঠা আমের পাতার উপর পড়ে। যার উপর ছত্রাকের জন্ম হয়। এর পর বৃষ্টি পড়লে সেই কালো রঙের ছত্রাক পাতা থেকে বয়ে আমের উপর পড়বে। এর ফলে আমের রং কালো হওয়ার পাশাপাশি আমের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে। সাতটারি গ্রামের শিশির গুপ্ত বলেন, “আমার দু’বিঘা আমবাগানে হাতে গোনা কয়েকটি গাছে মুকুল এসেছিল। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হবে দেখে এ বার গাছে কোনও স্প্রে করিনি। দু’দিন আগেই আমবাগানে গিয়ে দেখি একটি গাছেও মুকুল নেই। শোষক পোকা সব মুকুল নষ্ট করে দিয়েছে। এ বছর একটি গাছেও আম হবে না।”

চাষিরা জানান, বিপর্যয় যেন পিছুই ছাড়ছে না মালদহের আমকে। মুকুল বের হওয়ার শুরুতেই শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশা। যার দরুণ জেলার ৪০ শতাংশ আমগাছে মুকুলই ফোটেনি। বাকি ৬০ শতাংশ গাছে যতটুকুও বা মুকুল এসেছিল তা ফের বৃষ্টি ও ঘুরে আসা শীত, এই জোড়া প্রকোপে সেই মুকুল তা আধফোটা অবস্থায় থমকে গিয়েছিল। এর পরে মাঝে কিছুদিন অনুকূল আবহাওয়ায় মুকুল থেকে আমের গুটি বের হতে না হতেই গত হানা দিয়েছে শোষক পোকা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement