নতুন হারে ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বাস ধর্মঘটের হুমকি দিলেন মালিকদের একাংশ। শুধু তাই নয়, ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে সোমবার শিলিগুড়ি থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গার ২৫টি বাসও বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা।
বাস মালিকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, তেলের দাম, যন্ত্রাংশ এবং কর্মী বেতন দিয়ে পুরানো ভাড়ায় বাস আর চালানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি বাস ধর্মঘট শুরু হলে উত্তরবঙ্গ তো বটেই প্রত্যেক জেলার সাধারণ যাত্রীদের চরম ভোগান্তির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে উত্তরবঙ্গের প্রায় ৬ হাজার রাস্তার থাকা বেসরকারি বাস।
গত মাসের শেষে রাজ্য পরিবহণ দফতর কলকাতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজ্যের সমস্ত জেলার বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়িয়েছে, প্রথম ছ’কিলোমিটারের জন্য ১ টাকা। পরের প্রতি কিলোমিটারের জন্য পুরনো হিসাবেই ৫৫ পয়সা করে ভাড়া নিতে বলা হয়েছে জেলার বাস মালিকদের। আর এতেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মালিকরা তাঁদের আপত্তির কথা লিখিতভাবে পরিবহণ দফতর তো বটেই খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। নতুন হারে ভাড়া নেওয়া চালু না করলে শেষ অবধি আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার বেসরকারি বাস ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন মালিকেরা। ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে এ দিন থেকে শিলিগুড়ি থেকে রায়গঞ্জ, বালুরঘাট ও মালদহগামী ২৫টি বাস বন্ধ করে দেন মালিকেরা। উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গে নতুন সরকারি হারে কেবলমাত্র ভাড়া চালু করে করেছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম কর্তৃপক্ষ। আর এ ছাড়া ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে কেবলমাত্র দার্জিলিং জেলায়।
সারা বাংলা বাস মিনিবাস সমন্বয় কমিটির সহ-সভাপতি প্রণব মানি বলেন, “কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকায় বড়জোর গাড়িগুলি ২০-২২ কিলোমিটারের মধ্যে চলাচল করে। জেলার রুটগুলির ক্ষেত্রে তা ১০০ কিলোমিটার কোনও ব্যাপারই নয়। সেখানে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া না বাড়ালে বাস চালানো সম্ভব নয়।” তিনি জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে কয়েক দফায় দাবির কথা সরকারকে জানানো হয়েছে। কিছু না হলে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর সব জেলায় বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনও উপায় থাকবে না। বাস মালিকদের দাবি, বর্তমান বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে ২৫ পয়সা করে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়ানো হোক।
বাস মালিকেরা জানান, গত ২৬ অগস্ট কলকাতায় বাস ভাড়া নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে ১৪ রকম বেসরকারি বাসের বিভাগ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে কলকাতার জন্য ৪ কিলোমিটারে ১ টাকা করা বাড়ানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। আর দার্জিলিং জেলার চারটি বিভাগের ভাড়া বৃদ্ধি হয়। এরমধ্যে লোকাল, মিনি-এক্সপ্রেস, সমতল-পাহাড় এবং পাহাড়-পাহাড় রুটের বাস রয়েছে। সেখানে পাহাড় ছাড়া বাকি দুটি ক্ষেত্রে চার কিলোমিটার অবধি ১ টাকা বাড়ানো এবং পরবর্তীতে কিলোমিটার প্রতি ১৫ পয়সা করে বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাকি জেলার ক্ষেত্রে প্রথম ছয় কিলোমিটার ১ টাকা বাড়িয়ে পুরানো কিলোমিটার প্রতি ভাড়া রাখার কথা বলা হয়। এখানেই আপত্তি তুলেছেন মালিকেরা।
উত্তরবঙ্গের নানা জেলার মালিকেরা জানান, নতুন হারে ভাড়া নিয়ে মাত্র ১ টাকা ভাড়া বাড়ছে। কোচবিহার বা রায়গঞ্জের বর্তমান ভাড়া ৯০ টাকা এবং ১০০ টাকা। নতুন হারে ভাড়া নিলে তা দাঁড়াবে মাত্র ৯১ টাকা এবং ১০১ টাকা। যা মেনে নেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। বাস মালিকদের সংগঠনের নেতা প্রণববাবু জানান, পুরোটাই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ রাজ্যের সড়ক পরিবহণের ৯৫ শতাংশ গাড়ি আমরাই চালাই। পরিবহণ দফতরের অফিসারদের আমরা বিষয়টি জানিয়েছে। তাঁরা এখন অবধি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসই দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রায়গঞ্জ, বালুরঘাট ও মালদহে রুটে সমস্যা লেগেই রয়েছে। ভাড়া কম ছাড়াও ডালখোলা রেলগেটের জন্য গাড়িগুলি যানজটে আটকে পড়ছে। জাতীয় সড়কের অবস্থা যত কম বলা হয় ততই ভাল।