তৃণমূলের ছাত্রনেতাদের সুপারিশে নিয়ম ভেঙে কম নম্বর পাওয়া অনেক ছাত্রছাত্রী শিলিগুড়ি কলেজে ভর্তি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কম নম্বর পাওয়া যে ন’জন ছাত্রছাত্রীর ভর্তির জন্য প্রাক্তন ছাত্রনেতা সুপারিশ করে মাথায় বোতল ভেঙেছিলেন তাঁদের একাংশ মঙ্গলবার ওই অভিযোগ তুলেছেন।
তাঁদের অভিযোগ, নম্বর কম থাকায় শিলিগুড়ি কলেজে তাঁদের ভর্তির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। অথচ বর্তমানে কলেজের ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল ছাত্রনেতা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের সুপারিশে আরও কম নম্বর পাওয়া বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। এমনকী ভর্তির জন্য ওই পড়ুয়ারা টাকাও দিয়েছেন বলে তাঁদের সন্দেহ।
ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তমাল পাল। তিনি বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অভিযোগকারীদের হাতে কোনও তথ্য প্রমাণ থাকলে তাঁরা ব্যবস্থা নিক।” শিলিগুড়ি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উজ্জ্বলচন্দ্র সরকার বলেন, “এ দিন পরিচালন সমিতি এবং শিক্ষক সমিতির বৈঠক ডেকে ছাত্রনেতা মাথায় বোতল ভাঙার বিষয়টি জানানো হয়েছে। সেখানে উপস্থিত সদস্যরা ঘটনার নিন্দা করেছেন। তবে নম্বর কম থাকলেও নিয়ম ভেঙে একাধিক জন ভর্তি হয়েছে বলে ওই ছাত্রনেতা ৯ জনকে ভর্তি করাতে যে অভিযোগ তুলেছেন তা খতিয়ে দেখা হবে বলে পরিচালন সমিতির বৈঠকে ঠিক হয়েছে।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায় জানান, ভর্তি নিয়ে সব কলেজেই সমস্যা থাকে। কেউ কোনও কলেজে ভর্তি হতে পারেনি, এমন ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সে সময়ে মেটানো হয়েছে। এতদিন পরে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে টিএমসিপির বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে।
সোমবার কলেজের এক প্রাক্তন তৃণমূল ছাত্রনেতা তথা ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিত্ মণ্ডলের সুপারিশ কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিতে না-চাওয়ায় তিনি অধ্যক্ষের ঘরের সামনে মাথায় তিনটি বিয়ারের বোতল ভাঙেন। কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন তিনিও। এ দিন জখম ছাত্রনেতা প্রসেনজিত্কে দেখতে হাসপাতালে যান ভর্তি হতে না পারা ৯ জন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। তাঁদের মধ্যে বিধান নাথ, প্রীতম পালরা উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে এই কলেজে কলা বিভাগে পাস কোর্সে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। মৌসুমি সাহা, শম্পা সাহা, বিকাশ মজুমদাররা ৩৭, ৩৮.২৫ এবং ৪১ শতাংশ নম্বর পান। প্রীতম, মৌমিতা, বিকাশরা সূর্যসেন কলেজে ভর্তির আবেদন করলে এই কলেজে ভর্তির চেষ্টা করে সেখানে আর ভর্তি হননি কেউ।
তাঁদের অভিযোগ, “আমাদের চেয়ে কম নম্বর পেয়ে অনেকে ভর্তি হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের নথি দেখলেই তা পরিষ্কার বোঝা যাবে। বর্তমানে কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকজনের মাধ্যমে তাঁরা ভর্তি হয়েছেন। অনেকে তার জন্য টাকা দিয়েছেন। আমরা কাউকে টাকা দিইনি। অন্যরা কম নম্বর পেয়ে ভর্তি হতে পারলে আমরা কী অপরাধ করলাম? আমাদের হয়ে প্রসেনজিত্দা চেষ্টা করেছিলেন। তার কথা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড়া সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অনার্সে ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। অথবা সার্বিকভাবে ৫০ শতাংশ নম্বর এবং অনার্সের বিষয়ে ৬০ শতাংশ পেলেও হবে। পাস কোর্সে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ৪৫ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। তবে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে মেধা তালিকা অনুসারেই পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়া হবে। তবে তফসিলি জাতি উপজাতি ছাত্রছাত্রীরা যে কোনও বিভাগে পাশ করলেই পাসকোর্সে ভর্তির আবেদন করতে পারেন। অনার্সে তাঁদের জন্য ছাড় রয়েছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি যে নম্বর পর্যন্ত হচ্ছে তার উপর ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভর্তির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।