নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যুতে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা

বহুতল সংস্কারে সময়ে কংক্রিটের চাঙর পড়ে নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। রবিবার নিহতের পরিবারের সদস্যরা শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ জানান। গত শনিবার দার্জিলিং জেলা লিগাল এইড ফোরাম থানায় আবেদন করে মৃত্যুর ঘটনায় ভবনের নির্মাণ সংস্থার গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবি তোলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৪
Share:

বহুতল সংস্কারে সময়ে কংক্রিটের চাঙর পড়ে নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। রবিবার নিহতের পরিবারের সদস্যরা শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ জানান।

Advertisement

গত শনিবার দার্জিলিং জেলা লিগাল এইড ফোরাম থানায় আবেদন করে মৃত্যুর ঘটনায় ভবনের নির্মাণ সংস্থার গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবি তোলে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ফোরামের আবেদনকেই অভিযোগ হিসাবে ধরে আইপিসি-র ৩০৪ এ ধারায় নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। এ দিন নিহতের পরিবারের তরফে দায়ের করা সেই অভিযোগকে মামলায় জুড়ে দেওয়া হবে। মৃতের ওই পরিবারের আশঙ্কা, পরিকল্পনা করেও কেউ খুন করে থাকতে পারে।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনে সংস্কার কাজ চলার সময়ে মাথায় কংক্রিটের চাঙর পড়ে ভবনেরই নিরাপত্তা কর্মী নয়ন রায়ের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

পুরসভার থেকে কোনও অনুমতি ছাড়া এবং ন্যূনতম সর্তকতা মূলক ব্যবস্থা ছাড়াই চার তলা ভবনের সামনের অংশ ভেঙে ফেলার কাজ চলছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। সে কারণেই নীচে দাঁড়ানো নয়নবাবুর মাথায় সরাসরি কংক্রিটের চাঙর এসে পড়ে বলে অভিযোগ। ঘটনার পরেই কংক্রিট ভাঙার মিস্ত্রিরা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এমনকি ঘটনার পরে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও হয় বলে হিলকার্ট রোডের ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দাদের একাংশের দাবি।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, “ঘটনার দিনই অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে সবই খতিয়ে দেখা হবে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ওই বাণিজ্যিক ভবন সম্পর্কে এবং কী ধরনের কাজ চলছিল তারও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। আপাতত নয়নবাবুর ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে পুলিশ। রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। এদিন নিহতের দিদি গৌরী ভৌমিক শিলিগুড়িতে এসে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

গৌরীদেবী ইনদৌরের একটি স্কুলের শিক্ষিকা। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ময়নাগুড়িতে এসেছেন। মৃতের পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, নয়নবাবুর এক প্রতিবন্ধী ভাই এবং অবিবাহিত বোন রয়েছেন। দু’জনেরই ভরনপোষনের দায়িত্ব ছিল নয়নবাবুর উপর। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারেও অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। নয়নবাবুরা চার ভাই চার বোন। নয়নবাবুর আরেক ভাইয়ের চায়ের দোকান রয়েছে। তিনিও এদিন গৌরীদেবীর সঙ্গে শিলিগুড়িতে আসেন।

শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরে নয়নবাবুর পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। যদিও ঘটনার পর থেকে ওই ভবনের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। গৌরী দেবীর অভিযোগ, “ভবন ভাঙার কাজ চলছে, অথচ নিচে কংক্রিটের টুকরো পড়া আটকানোর জন্য কোনও ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এই গাফিলতির জন্যই ভাইকে মরতে হল।” তিনি জানান, সম্প্রতি পরিবারের সদস্যদের ফোন করে ভবনের নানা ঝুঁকির কথা নয়নবাবু জানিয়েছিলেন এক আত্মীয়কে ভাই ফোন করে জানিয়েছিল, ভবনে যে ভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজকর্ম চলছে। এমনকি ওঁকে মেরে ফেলা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছিল। সে কারণে ঘটনাটি পরিকল্পিত কিনা তাও খতিয়ে দেখুক পুলিশ।

এ দিকে, এদিনও বানিজ্যিক ভবনের নির্মাণ সংস্থা সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার নিরঞ্জন মিত্তলকে পুলিশে দায়ের হওয়া অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমি শিলিগুড়ির বাইরে রয়েছি। এ বিষয়ে যা বলার সংস্থার তরফে কাজকর্ম দেখভালের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক বলবেন।” এ দিনও সংস্থার আধিকারিক রতন বেনিপুরীকে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

অনুমতি ছাড়াই ভবনের সংস্কার কাজ করা হলেও, পুরসভার তরফে কোনও পদক্ষেপ কেন করা হয়নি সে প্রশ্নও বাসিন্দারা তুলেছেন। শিলিগুড়ি পুরসভার কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভূটিয়া বলেন, “ভবনের সংস্কারের অনুমতি ছিল কি না এবং গাফিলতির বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পদক্ষেপ হবে।” শহরের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, হিলকার্ট রোডের উপর অনুমতি ছাড়া সংস্কার কাজ এবং তার জেরে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠায় পুরসভা এবং পুলিশের উচিত দ্রুত তদন্ত শেষ করা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement