উত্তরবঙ্গ সফর শেষ করে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড় থেকে নামার পরপরই ফেসবুকে নতুন করে গোর্খাল্যান্ডের দাবি তোলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। তারপর এ দিন, শুক্রবার শিক্ষক দিবস উপলক্ষে একটি সভায় গুরুঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে তাঁর বিরুদ্ধে ফের সুর চড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, “কিছু লোক আছেন, যাঁরা ইতিমধ্যে পাহাড়ে ২৮ বার এসেছেন। এসে তাঁরা নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয় না। এখনও কিছুই হয়নি। আর ফিতে কাটার যে সব অনুষ্ঠান হয়, তা আসলে কাদের প্রকল্প তা পাহাড়ের মানুষ জানেন।”
মুখ্যমন্ত্রীর গত বারের পাহাড় সফরের সময় তাঁর সঙ্গে গুরুঙ্গের আলোচনা হয়। গুরুঙ্গের জন্মদিন উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে উপহারও পাঠান। তবে লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে মোর্চার যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা যে পুরোপুরি মেটেনি, সে কথাও তখন বোঝা গিয়েছিল। এ বার মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর পাহাড়ে যান। তার চার দিন আগেই ২৭ অগস্ট পাহাড় ছেড়ে দিল্লি চলে যান গুরুঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় থেকে নেমে যাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার ফের দার্জিলিঙে ফেরেন তিনি।
তারপরে এ দিন দার্জিলিঙের ভানু ভবনে ওই সভায় গুরুঙ্গ বলেন, “আসলে আমাদের দাবিকে (গোর্খাল্যান্ড) দমিয়ে রাখতেই ওই লোকদের বারবার পাহাড় সফর হয়।” পাহাড়ে লেপচা, তামাঙ্গদের মতো একাধিক বোর্ড তৈরি করা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে এ দিন কটাক্ষ করেছেন গুরুঙ্গ। তিনি বলেছেন, “পাহাড় সফরে যাঁরা আসেন, তাঁদের মাঝে মধ্যেই ড্রাম বাজাতে দেখা যায়। কখনও তা লেপচাদের, কখনও তা আবার তামাঙ্গ বা রাইদের।” সভায় তাঁকে বলতে শোনা যায়, বর্তমান পাঁচ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কিছু হয়, তা হলে এই সময়কালের মধ্যেই হবে।
গুরুঙ্গের বক্তব্যের প্রসঙ্গে তৃণমূলের পাহাড়ের নেতা এন বি খাওয়াস জানান, মুখ্যমন্ত্রী তো গোটা রাজ্যেরই মুখ্যমন্ত্রী। ওঁর অধিকার রয়েছে সর্বত্র যাওয়ার। তিনি বলেন, “এ নিয়ে কে কী বলল, তাতে যায় আসে না। আর মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে বহু প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন। সেগুলির কাজও চলছে। কাজ শেষ হতে তো সময় লাগবে।”
এদিনের অনুষ্ঠানে গুরুঙ্গ পাহাড় জুড়ে নেপালি ভাষা ব্যবহারের সওয়াল করেছেন। তাঁর কথায়, নেপালি ভাষা ১৯৯২ সালে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু এর ব্যবহার হচ্ছিল না দেখেই জিটিএ-তে তার ব্যবহার শুরু করা হয়। তাঁরা বিভিন্ন সংগঠন, কলেজ, স্কুলকেও তা সর্বতোভাবে ব্যবহার করতে অনুরোধ করবেন বলে জানান। সেই সঙ্গেই মোর্চা সভাপতি জানান, পাহাড়ের স্কুলের ছেলেমেদের পোশাকের জন্য রাজ্য সরকার ৪০০ টাকা করে দেয়। তিনি বলেন, “কিন্তু আজকাল ওই টাকায় কী হয়? তাই আমরা আরও ৬০০ টাকা করে ছেলেমেয়েদের দেব।” তবে তিনি নিজে বেশিদিন রাজনীতি করবেন না বলেও জানান গুরুঙ্গ। তাঁর কথায়, “রাজনীতি নোংরা খেলা।”
রাজ্যের সঙ্গে এই টানাপোড়ের মধ্যে গুরুঙ্গের জন্য বরাদ্দ দেহরক্ষী এবং পুলিশ এসকর্ট ভ্যান এদিনই ফিরিয়ে দিয়েছে সরকার। গত লোকসভা ভোটের আগে ১৫ মার্চ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তা সরানো হয়েছিল।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির অবশ্য দাবি, ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদা পান জিটিএ চিফ। ভোটের পরে তাই সরকারের উচিত ছিল দ্রুত ওই ব্যবস্থা ফের বহাল করা।