লোকসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই নাটকের শহর বালুরঘাটে যেন আলোড়ন পড়ে গেল। বেশ কিছুদিন ধরেই জল্পনা ছিল, বুধবার যখন তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় বালুরঘাট কেন্দ্রে নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের নাম ঘোষণা হল, শহরের অনেকেই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন।
সম্প্রতি বেশ কয়েকবার বালুরঘাটে এসেছিলেন অর্পিতা। জেলার কুশমণ্ডি ব্লকে স্থানীয় কচিকাচাদের নাটকের তালিম দিতে এসেছিলেন তিনি। এর আগে উত্তরবঙ্গ নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের জন্যও প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে আসেন তিনি। দু’বারই শহরের নাট্যকর্মীদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা করেন তিনি। শহরে নাটকের পরিকাঠামোর সমস্যা সহ এলাকার নাগরিক সমস্যা নিয়েও খোঁজখবর করেছিলেন তিনি। একসময়ে ‘পশুখামার’ নাটক নিয়ে তৎকালীন রাজ্যের বাম শাসক দলকে ‘বেকায়দায়’ ফেলে দিয়েছিলেন অর্পিতা।
লোকসভা আসন থেকে নাট্যকর্মী প্রার্থী হওয়ায় প্রতিক্রিয়া গোপন করেননি বালুরঘাটের নাট্যশিল্পীরাও। জেলার নাট্যকর্মী সুজন রায়, সৌরভ দেববর্মনেরা বলেন, “ওঁকে চিনি। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন বিষয়ে ওঁর সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। উনি প্রার্থী হওয়ায় আমরা খুশি। কারণ সংসদেও নাটকের কথা পৌঁছনো উচিত।”
গত লোকসভা ভোটে বালুরঘাট আসনে তৃণমূল ৫ হাজার ভোটে হেরেছিল। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত এবং পুরসভা ভোটে দলের সাফল্যে উৎসাহী তৃণমূল নেতারা। দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “দলনেত্রী লোকসভার প্রার্থী বাছাই করেছেন। জেলায় সংগঠন যথেষ্ট ভাল। দলের প্রার্থীর জেতাতে সকলে মিলে প্রচার করব।” এ দিন সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে টেলিফোনে অর্পিতা বলেন, “সম্পূর্ণ অন্য একটা ক্ষেত্রে, আমার পথ চলা শুরু হল। বিশেষ করে বালুরঘাটের মতো সংস্কৃতি এবং নাটকের জায়গায় প্রার্থী হতে পেরে বেশি খুশি হয়েছি। নাট্যকর্মীদের সংসদে পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে নতুন দিশা দেখাতে চাইছেন এটা দৃষ্টান্তমূলক। দলের সৈনিক হিসেবে আমিও নিজের কর্তব্য পালন করবেন।”
অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক বিমল সরকারকে আরএসপি বালুরঘাটে প্রার্থী করেছে। ছাত্রাবস্থা থেকেই বিমলবাবুর সক্রিয় বাম রাজনীতিতে জড়িত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাশ করা বিমলবাবু একসময়ে বালুরঘাট কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানও ছিলেন। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরী বলেন, “যিনি বাসিন্দাদের সমস্যার কথা বুঝে সংসদে সরব হতে পারবেন, তাঁকেই বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ প্রার্থী করেছেন। বহিরাগত কাউকে প্রার্থী করতে হয়নি আমাদের।”
সক্রিয় রাজনীতিতে থাকলেও আগে কখনও ভোটে লড়েননি বিমলবাবু। নতুন মুখ কাউকে প্রার্থী করতেই ওঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বিমলবাবুর কথায়, ‘‘আগে কখনও ভোটে না লড়লেও, বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ভোট প্রচারে গিয়ে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যার কথা শুনেছি। আশা করি লোকসভা ভোটে বাসিন্দারা নিরাশ করবেন না।”