ধর্ষণের চেষ্টা ও অভিযোগকারিণীকে হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পুলিশের একাংশের সঙ্গে যোগসূত্র থাকাতেই শীতলখুচির পঞ্চারহাটের ওই অভিযুক্তেরা পুলিশি হানার খবর আগেভাগে পেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবারই ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত প্রকাশ বর্মনকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। পরদিন, বুধবারই পলাতক প্রকাশ দলবল নিয়ে ফের এলাকায় এসে অভিযোগকারিণী ও তাঁর স্বামীকে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। ওই দিন মৌখিকভাবে জানালেও বৃহস্পতিবার অভিযোগকারিণী নিজে শীতলখুচি থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ দিন তাঁর অভিযোগ, “বুধবার আমার স্বামীকে রাস্তায় আটকে মারধর করে অভিযুক্ত প্রকাশ বর্মন। বোতল ভেঙে তাঁর পেটে কাচ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। স্বামীকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও ঘুষি ও চড় মারা হয়।” অভিযোগকারিণীর ক্ষোভ, “মৌখিক ভাবে ওইদিনই পুলিশকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। তাই আজ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। পুলিশের উপরে হামলার পরেও কেন কেউই গ্রেফতার হচ্ছে না আমরা বুঝতে পারছি না।”
মাস ছ’য়েক আগে প্রকাশের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করেছিলেন পঞ্চারহাট এলাকার ওই মহিলা। প্রকাশের দাদা উত্তম তৃণমূলের ছোট শালবাড়ি অঞ্চলের অঞ্চল সভাপতি হওয়ার ‘সুবাদেই’ পুলিশ উত্তমকে এতদিন ধরেনি বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার প্রকাশকে দেখতে পেয়ে পুলিশের টহলদারি ভ্যান ডেকে তাকে ধরিয়ে দেন মহিলা নিজেই। সেই সময় মাথাভাঙায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এলাকার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। দলের নেতার গ্রেফতারির খবর পেয়ে তাঁরা পুলিশের উপর চড়াও হয়ে প্রকাশকে ছিনিয়ে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। তবে তার পরদিনই তাঁরা এসে এলাকায় ভয় দেখিয়ে যান বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এ দিন নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করেছেন ওই মহিলাও। তাঁর কথায়, “যেভাবে অভিযুক্তেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাতে যে কোনও সময় ফের আক্রান্ত হতে পারি।”
পুলিশের অবশ্য দাবি, অভিযুক্তেরা সকলেই পলাতক। পরপর দু’দিন তাঁদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হলেও কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “নির্দিষ্ট ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমরা অভিযুক্তদের কয়েকজনকে চিহ্নিতও করেছি। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
শাসক দলেরই একাংশ নেতার অবশ্য অভিযোগ, অভিযুক্তেরা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে যাঁরা সরব হয়েছেন তাঁদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দিচ্ছে। তৃণমূলের ব্লক ও জেলা নেতাদের একাংশ অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়ানোয় পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করার সাহস দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ। এমনকী পুলিশের একটি অংশও আগাম হানার খবর জানিয়ে অভিযুক্তদের পালাতে সাহায্য করছেন বলে তাঁদের ক্ষোভ। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছকমল মিয়াঁ বলেন, “ফের যাতে কোনও গণ্ডগোলের ঘটনা না ঘটে সে জন্য আমরা পুলিশের টহলদারি চাই। না হলে এলাকায় থাকব কী করে?” প্রকাশবাবুর দাদা উত্তমবাবুর অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
পুলিশ অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে নারাজ। পুলিশ কর্তারা জানান, ঘটনার পর থেকে নিয়মিত পুলিশ এলাকায় টহল দিচ্ছে। অভিযানও চালানো হচ্ছে। ওই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। যারা ওই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে হবে।”