ভরা বর্ষাতেও এবার বৃষ্টি অনেক কম হওয়ায় ধান ও পাট চাষে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কোচবিহারের কৃষকরা। জলের অভাবে পাট পচাতে পারছেন না তারা। ফলে অনেক কৃষকের ক্ষেতের পাট এখনও ক্ষেতেই রয়ে গিয়েছে। একই ভাবে ধানের ক্ষেত্রেও জলের অভাবে বীজতলার বৃদ্ধি হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কৃষি দফতর। পাম্পসেট দিয়ে কৃষকদের ক্ষেতে জল দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকের পক্ষেই এভাবে সেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জুলাই মাসে সাধারণ ভাবে ২২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন। এবারে বৃষ্টি হয়েছে ১৫০০ মিলিমিটার। প্রায় সাড়ে ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টি কম হওয়ায় চাষ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কৃষি দফতরের জেলা আধিকারিক অসিত পাত্র বলেন, “বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম হওয়ার ফলে ধান-পাট দুটি চাষেই এবার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকে বৃষ্টি শুরু না হলে সমস্যা আরও বাড়বে।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক বছর ধরেই কোচবিহার জেলায় পাট চাষের পরিমাণ কমছে। একদিকে উৎকৃষ্ট মানের পাটবীজ না পাওয়া এবং জলের অভাবে পাট ঠিকমতো পচাতে না পারার জন্যই মান ধরে রাখতে পারছেন না চাষিরা। বাজারে পাটের দামও ঠিকমতো মিলছে না। ২০১২ সালে কোচবিহারে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। ২০১৩ সালে ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এবারে তা কমে দাড়িয়েছে ৩২ হাজার হেক্টরে। পাট পচানোর জন্য জলের প্রয়োজন মেটাতে এক ধরণের পাউডার তৈরি করেছিলেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু পরীক্ষামূলক ভাবে তার প্রয়োগে সাফল্য আসেনি। কদমতলার পাট চাষি নন্দ বর্মন জানান, তিনি এবারে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। সেই পাট কেটে পচানোর জন্যএকটি ডোবায় রেখেছেন। কিন্তু ডোবার জল ক্রমশ কমে যাওয়ায় পাট পচার বদলে শুকিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “বিঘাপিছু ছয় হাজার টাকা খরচ করে পাট চাষ করেছি। জলের অভাবে পাট পচাতে পারছি না। বহু টাকা লোকসানে পড়ে যাব। এই অবস্থায় কী হবে বুঝতে পারছি না। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।”
ধানের ক্ষেত্রেও এবার একইকম সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। কৃষক নন্দবাবু জানান, তিনি সাত বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। প্রতিবার পাট কেটে ওই জমিতে ধানের বীজ রোপণ করেন। ওই জমি অনেকটাই উঁচু, ফলে এবারে বৃষ্টি না হওয়ায় ওই জমিতে ধান চাষ করতে পারেননি তিনি। যে সাত বিঘায় ধান চাষ হয়েছে সেখানেও পাম্পসেট দিয়ে জল দিতে হচ্ছে। ফলে চাষের খরচ বেড়ে গেছে অনেকটাই। তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি চার হাজার টাকা চাষের খরচ এবার আরও বেড়ে গেছে বৃষ্টি না হওয়ায়। ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।