মালদহের বাবলা কমলপুরে দেওয়াল লিখন নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘর্ষের পরে এলাকায় পুলিশি টহল। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
ফের প্রকাশ্যে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল মালদহের কালিয়াচকে। দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংঘর্ষে সোমবার সকালে কালিয়াচকের বাবলা কমলপুর গ্রামে তিন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, গুলি চালিয়েছে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই। তাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে এবং একটি বাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছে তৃণমূল।
সম্প্রতি কালিয়াচক কলেজ নির্বাচনে ও তারপরে কাছাকাছি নওদা-যদুপুরে সংঘর্ষে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। তবে ওই দু’টি ঘটনায় কেউ আহত হননি। কিন্তু এ দিন তেজাউল শেখ, ফারুক আজম ও হুমায়ুন মোমিন নামে তিন জনের গায়ে গুলি লেগেছে। কংগ্রেসের স্থানীয় বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনের দাবি, আহত তিন জনই তাঁদের সমর্থক। তাঁদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ এই দিন ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করেছে সায়েদ আলি ও ইলিয়াস শেখ নামে দুই ব্যক্তিকে। তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী তথা মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “ধৃত দু’জনই তৃণমূল কর্মী। তবে তাঁরা কেউই গুলি ছোড়েননি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সওয়া ন’টা নাগাদ ওই গ্রামের মহিসুদ্দিন মোমিনের বাড়ির দেওয়ালে লেখা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। মহিসুদ্দিন বলেন, “গত ৩ মার্চ কংগ্রেস দেওয়াল লিখনের অনুমতি নিয়েছিল। আমি তৃণমূলকে দেওয়াল লেখার অনুমতি দিইনি। এ দিন কিন্তু তৃণমূলের লোকজন সেখানে লেখা শুরু করে।” মন্ত্রী সাবিত্রীদেবীর অবশ্য দাবি, “দেওয়ালটি আমাদেরই দখলে ছিল। কংগ্রেস সেখানে লিখতে শুরু করায় গোলমাল বাঁধে।” বাজার এলাকায় মহিসুদ্দিনের বাড়ি ঘিরে বহু মানুষ জড়ো হয়ে যান। শুরু হয় তর্কাতর্কি। সেখান থেকে হাতাহাতি। সামান্য দূরেই একটি বাড়ির দোতলায় তৃণমূলের দলীয় দফতর। তৃণমূল কর্মীরা ছুটে সেখানে চলে যান। নীচে তখন তাঁদের ঘিরে ছিলেন প্রচুর মানুষ। কংগ্রেসের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি হাসিমুদ্দিন আহমেদের
দাবি, “এর পরেই দোতলা থেকে গুলি ছুড়তে শুরু করেন তৃণমূলকর্মীরা। দলীয় দফতরেই আগ্নেয়াস্ত্র রাখা ছিল।” বাজারে তখন হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তার মধ্যেই আহত হন ওই তিন জন। তাঁদের মধ্যে তেজাউল শেখের দু’পায়ে গুলি লেগেছে। ফারুক আজমের কোমরে গুলি লেগেছে। বাঁ পায়ের হাঁটুতে গুলি লেগেছে হুমায়ুন মোমিনের।
তেজাউল জানান, তিনি বাজার করতে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “হঠাৎ তৃণমূলের দোতলা পার্টি অফিস থেকে এক জন এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছেন। পালাতে গিয়ে পরপর দু’টি গুলি লাগে পায়ে।” মন্ত্রী সাবিত্রীদেবীর অবশ্য দাবি, “কংগ্রেসের আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই গুলি চালিয়েছে। সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ওদের নিজেদের লোকের গায়ে লেগেছে।”
জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানিয়েছেন, গুলি চালানোর ঘটনায় মোট সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তিনি বলেন, “দু’পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। সেই ভিত্তিতে মামলাও দায়ের হয়েছে।” এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। এ দিন ঘটনার পরে এলাকায় সমস্ত বাজারঘাট বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় পুলিশ ও র্যাফের টহল।