রায়গঞ্জের মিরুয়ালে দুর্ঘটনায় মৃত অনন্ত পালের শোকার্ত পরিজন। ছবি: তরুণ দেবনাথ।
একই দিনে দুই দুর্ঘটনায় দুই যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে তেতে উঠল উত্তরবঙ্গের দুই জেলা। যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ব্যর্থতার অভিযোগে মঙ্গলবার খেপে উঠল জনতা। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে মালদহে জখম হন দু’পক্ষের ছ’জন। দোকানে ভাঙচুর হয়। উত্তর দিনাজপুরেও এলাকাবাসী ঘেরাও করেন পুলিশকে। আগুন লাগানো হয় গাড়িতে।
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পুরাতন মালদহের নারায়ণপুর এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক পেরনোর সময় সাবির শেখ (২৫) নামে এক যুবককে পিষে দেয় একটি ট্রেলার। ঘটনাস্থলেই মারা যান মঙ্গলবাড়ির জলঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় দর্জি সাবির। দুর্ঘটনার পরে রাস্তায় তাঁর মৃতদেহ রেখে শুরু হয় অবরোধ। এলাকাবাসীর দাবি, জাতীয় সড়কের দু’ধারে জবরদখলের কারণে ওই এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ যান নিয়ন্ত্রণে নজর দেয় না। জবরদখলকারীদেরও উচ্ছেদ করে না। মালদহের ‘মার্চেন্ট চেম্বার অফ কর্মাস’-এর সম্পাদক উজ্জ্বল সাহার কথায়, “ঢিলেঢালা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য দুর্ঘটনা বাড়ছে।”
অবরোধ তুলতে গেলে বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। ট্রাফিক পুলিশের ওসি-সহ তিন পুলিশকর্মী জখম হন। বাসিন্দাদের দাবি, স্থানীয় তিন জনও পুলিশের পাল্টা মারে জখম হন। এলাকার কয়েকটি দোকানে জনতা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। সে সময়ে পুলিশ প্রথমে লাঠি চালায় এবং পরে শূন্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে এলাকাবাসীর দাবি। লাঠি চালানো এবং গুলি ছোড়ার কথা মানেনি পুলিশ। তাদের বক্তব্য, জনতা তাদের উপরে ইট-পাথর বৃষ্টি করে। বিক্ষোভ-অবরোধের জেরে অন্তত ঘণ্টাদু’য়েক জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। অতিরিক্ত এসপি অভিষেক মোদির নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, পুলিশের লাঠির আঘাতে আহতদের মধ্যে রাজকুমার দাস নামে এক যুবকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় লাঠি চালানো বা শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে তাদের উপরে হামলা করা হয়। তিন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।” ওই এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার যে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দারা করছেন, তা অবশ্য খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
মালদহের নারায়ণপুরে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে জখম পুলিশকর্মী ভর্তি হাসপাতালে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জেও জনতার ক্ষোভ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নেই। এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ রায়গঞ্জ থানার মিরুয়াল এলাকার রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্য সড়কে ট্রেকারের ধাক্কায় মারা যান মোটরবাইক আরোহী অনন্ত পাল (৩৬)। বাড়ি ওই এলাকারই পালপাড়ায়। অনন্তবাবু বাড়ি থেকে মোটরবাইকে চেপে কর্ণজোড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। সে সময় উল্টোদিক আসা একটি ট্রেকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইকটিকে ধাক্কা মারে। স্থানীয় কেব্ল অপারেটর অনন্তর মৃত্যুর খবর পেয়ে জনতা ট্রেকারটিকে আটকে পাশের নয়ানজুলিতে ফেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। রাস্তাটিতে স্পিড ব্রেকার তৈরি এবং যান নিয়ন্ত্রণের দাবিতে শুরু হয় অবরোধ।
সম্প্রতি পূর্ত দফতর রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্য সড়ক সম্প্রসারণ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজ্য সড়ক চওড়া হওয়ার পর থেকে পুলিশের নজরদারির অভাবে রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রুটের বিভিন্ন যানবাহন অত্যন্ত দ্রুত চলাচল করছে। তাঁদের দাবি, তাই এ দিন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলে এলাকাবাসী তাদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রাজা বলেন, “এলাকাবাসীর অভিযোগ শুনেছি। ওই রাস্তায় ব্যারিকেড বাড়ানো হবে। নজরদারি বাড়ানো হবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে। পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা বলে স্পিড ব্রেকারও করা হবে।”