অটো ধর্মঘট। শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
তৃণমূলের ইউনিয়নের তোলাবাজির প্রতিবাদ করে ধর্মঘট করল শাসক দলেরই নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অটো ইউনিয়ন।
রবিবার শিলিগুড়ির কোর্ট মোড়ে আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত আশিঘর অটো ইউনিয়নের চালককে মারধরের অভিযোগ ওঠে আইএনটিটিইউসি-ই প্রভাবিত কোর্ট মোড় অটো চালকদের সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে আশিঘর মোড় থেকে সমস্ত রুটে অটো বন্ধ রাখে সেখানকার অটো চালকদের সংগঠন।
শিলিগুড়ির প্রায় সব অটো সংগঠনই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন প্রভাবিত। অটো চালকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়িতে তাঁদের সব সংগঠনই সদস্যদের কাছ থেকে দৈনিক ২০ টাকা করে নেয়। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে একই অটোচালকের কাছ থেকে বিভিন্ন সংগঠন একই দিনে টাকা দাবি করছে। তাই সেই অটো চালককে দিনে একাধিকবার ২০ টাকা করে বিভিন্ন সংগঠনকে দিতে হচ্ছে। এ দিন আশিঘরের অটো চালকদের সংগঠনের কাছে ২০ টাকা দিয়ে বেরিয়ে কোর্ট মোড়ে আসেন এক অটোচালক। তখন সেই এলাকার সংগঠনের সদস্যেরা ফের তাঁর কাছ থেকে ২০ টাকা দাবি করেন। তিনি তা দিতে অস্বীকার করলে গোলমাল বাঁধে। ওই চালককে মারধর করা হয়। তিনি তা পুলিশকেও জানিয়েছেন। এরপরেই ধর্মঘট শুরু হয়।
দলের একাংশের বিরুদ্ধে এদিন তোলাবাজির অভিযোগ করেছেন শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জনশীল শর্মাও। রঞ্জনবাবু অভিযোগ করেন, “বিভিন্ন জায়গায় অটোর সিন্ডিকেট করে তোলাবাজি হচ্ছে। দলের নেতাদের বিষয়টি এখনই দেখা দরকার।” তিনি জানান, তাঁর এলাকায় একটি অটো সংগঠন রয়েছে। সেখানেও চালক ও খালাসিদের সাহায্যের জন্য রোজ অটো পিছু ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। বছরের শেষে তা ফিরিয়েও দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, “কিন্তু অন্যত্র কার্যত জোর করে তোলাবাজি হচ্ছে। এদিন কোর্ট মোড় এলাকায় সেটাই হয়েছে।” যদিও এমন ঘটনা তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তবে তাঁর বক্তব্য, “কোনও রকম তোলা আদায় বরদাস্ত করা হবে না। তবে যদি অভিযোগ সত্যি হয়, তা হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আশিঘর মোড়ের অটো চালকদের সংগঠনের সম্পাদক মহাদেব সাহা জানান, কোর্ট মোড়ের অটো চালক ও মালিকদের সংগঠন কোর্ট মোড়, হিলকার্ট রোড, মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড় এবং দার্জিলিং মোড়ে দাঁড়িয়ে অটো পিছু ২০ টাকা করে আদায় করে। যদিও দার্জিলিং জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি অরূপরতন ঘোষ বলেন, “তোলা আদায়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা বরদাস্ত করা হবে না।” তিনি জানান, আশিঘর সংগঠনের চালকরা নিয়ম ভেঙে ১৪-১৫ জন যাত্রী ওঠান। তাতে বাধা দেওয়াতেই বচসা বাধে। তাতেই তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। একই দাবি কোর্ট মোড় সংগঠনের সম্পাদক নির্মল সরকারেরও। তিনি বলেন, “বেশি যাত্রী না নিতে বলে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল আশিঘরের সংগঠনকে। তবু ওরা কথা শোনে না। এ দিন আমাদের এক কর্মী বাধা দেওয়ায় তাঁকেই মারধর করা হয়। এখন তোলাবাজির কথা বলা হচ্ছে।”