লেপচা উন্নয়ন পর্ষদকে অর্থসাহায্য মুখ্যমন্ত্রীর। —নিজস্ব চিত্র।
নির্ধারিত সূচি মেনে দুপুর বারোটাতেই দার্জিলিঙের চৌরাস্তায় মুখ্যমন্ত্রী সরকারি সভা শুরু হবে ধরে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়। যদিও সকাল থেকে বৃষ্টি আর কুয়াশার কারণে প্রথমে সভা শুরুর সময় ১ ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়। জানানো হয় দুপুর ২টো নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী সভামঞ্চে আসতে পারেন। যদিও দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যেই মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় সভাস্থলে চলে আসেন। রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি, ডিজি (উপকূল) রাজ কানোজিয়া, উত্তরবঙ্গের আইজি জাভেদ শামিম আগে থেকেই সভাস্থলে ছিলেন। তবে তাঁরা কেউই মঞ্চে ওঠেননি। মঞ্চের নীচে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। মঞ্চে কোথায়, কী রাখা হবে তা-ও তদারকি করতে দেখা যায় মুখ্যসচিবকে। জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের প্রধান সচিব সৌরভ দাস, তফশিলি জাতি ও উপজাতি কল্যাণ দফতরের প্রধান সচিব সঞ্জয় থাডে, বন দফতরের প্রধান সচিব চন্দন সিংহ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব মনোজ অগ্রবাল সহ একাধিক সরকারি আধিকারিক ততক্ষণে মঞ্চের নীচে নিজেদের মধ্যে আড্ডার মেজাজে কথাবার্তা চালাচ্ছেন।
ঘণ্টা খানেকেরও বেশি সময় পরে, দুটো বাজতে মিনিট দশেক আগে মুখ্যমন্ত্রী সভাস্থলে আসেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই মঞ্চে ওঠেন সচিবেরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েত এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। শুরুতেই মুখ্যসচিবের সংক্ষিপ্ত স্বাগত ভাষণের পরে মুখ্যমন্ত্রীর আধঘণ্টার বক্তব্য। তারপরে তামাঙ্গ উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদ, দার্জিলিঙের জল প্রকল্প, লেপচাদের জন্য সরকারি বাড়ি বিলির কাজের উদ্বোধন এবং শিলিগুড়ির উপকন্ঠে ২৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাফারি পার্ক এবং শিলিগুড়িতে শ্রম ভবনের শিলান্যাস পর্ব মিটতেই, ঘণ্টাখানের মধ্যে সভা শেষ হয়। তামাঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদকে গৃহহীনদের বাড়ি বিলির জন্য আরও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকে জানিয়েছেন। এর আগে ১ হাজারটি বাড়ি তৈরির জন্য রাজ্য সরকার পর্ষদকে ২০ কোটি টাকা দিয়েছিল।
রাই, গুরুঙ্গ, ভূজেল, যোগী, থাম্বি সহ আরও ১১টি সম্প্রদায়ের জন্যও পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ রাজ্য সরকার তৈরি করতে আগ্রহী বলে মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যে জানিয়েছেন। তবে তার জন্য প্রতিটি সম্প্রদায়কে আদিবাসী মর্যাদা পেতে হবে। সে কারণে গত বুধবার ফের কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্য চিঠি পাঠিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতায় জানিয়েছেন। তাঁর কথা যে নিছক দাবি নয়, তা জানানোর জন্য সেই চিঠির প্রতিলিপিও এ দিন তামাঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সঞ্জয় মোক্তানের হাতে তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত বুধবার বিকেলে বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী নামার আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমাকে অনেকে বর্ষায় পাহাড়ে আসতে মানা করেছিল। পাহাড়ে বর্ষার সময়েও পর্যটন হতে পারে। উন্নয়নের জন্যই আমি এসেছি।” দার্জিলিঙের জল প্রকল্পের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পুরো কাজ শেষ হতে আরও তিন মাস সময় লাগবে। তবে আমরা চাই এখন থেকেই জল সরবারহ শুরু হোক, তাই এ দিন উদ্বোধন হয়েছে। যে এলাকার কাজ শেষ হয়েছে, সে এলাকাগুলিতে এ দিন থেকেই সরবরাহের কাজ শুরু হবে।” কার্শিয়াঙে পানীয় জল প্রকল্প, দার্জিলিঙে ন্যায্য মূল্যের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী প্রকল্পও দ্রুত শুরু হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের সাহায্যের কথাও তিনি মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন। বর্তমানে একশো দিনের কাজ, ক্ষুদ্র শিল্প এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টে রাজ্য এক নম্বর স্থানে রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী সভা থেকে দাবি করেছেন।