গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা হাত মিলিয়েছে বিজেপির সঙ্গে। তাতেই তৎপর হয়ে উঠেছেন সুবাস ঘিসিঙ্গের সমর্থকরা। তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন জিএনএলএফ নেতা-কর্মীরা। শুরু হয়ে গিয়েছে বার্তা চালাচালি। তৃণমূল সূত্রে খবর, দল গররাজি নয়। তবে জিএনএলএফ সভাপতি সুবাস ঘিসিঙ্গ কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেননি।
লোকসভা ভোটের আগে মোর্চা-বিজেপি জোট ঘোষণা হওয়ার পরেই তৃণমূলের সঙ্গে মোর্চার সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। শুক্রবার গ্রেফতার করা হয় মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যকে। শনিবার সকালে দার্জিলিং পাহাড়ের পাতলেবাস এলাকায় মোর্চার কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে তৃণমূলের একটি গাড়িতে ঢিল পড়লে কয়েকজন জখম হন। সিংমলা এলাকায় প্রচারে যাচ্ছিল গাড়িটি। কারও আঘাত অবশ্য গুরুতর নয়। এ নিয়ে মোর্চার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে বিমল গুরুঙ্গ বিষয়টি ‘সাজানো’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
জিএনএলএফ সূত্রের খবর, শনিবার এই ঘটনার পরে দলের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে ফের ঘিসিঙ্গের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, দ্রুত তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানোর। তৃণমূলের অন্দরের খবর, মোর্চাকে রুখতে ঘিসিঙ্গের সঙ্গে হাত মেলাতে আপত্তি নেই, তা জিএনএলএফ নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন পাহাড়ের তৃণমূল নেতৃত্বও। প্রকাশ্যে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও, তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়ার পাশে ঘিসিঙ্গ দাঁড়ালে ভোটের নকশায় কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মোর্চা নেতাদের অনেকেই।
জিএনএলএফ নেতাদের একটা বড় অংশের মতে, এখনই তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলালে দু’পক্ষই লাভবান হবে। কোথাও মোর্চা হামলার চেষ্টা করলে জিএনএলএফ-তৃণমূল একযোগে প্রতিরোধে নামলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। পাহাড়ের আনাচ-কানাচ পরিচিত থাকায় প্রচারের সময়ে কোথা থেকে কী আক্রমণ আসতে পারে, তার আন্দাজ আছে জিএনএলএফ নেতাদের। তৃণমূলের প্রচারে যাতে বাধা না আসে, সে ব্যাপারে তৎপর হবে জিএনএলএফ।
প্রতিদানে শাসক দলের সাহায্যে পাহাড়ে শতাধিক বন্ধ অফিস খোলাতে পারবেন ঘিসিঙ্গ। ভোটের পরেও ‘সম্পর্ক’ বজায় থাকলে ঘিসিঙ্গ ফিরতে পারেন পাহাড়ে। তাঁকে আর শিলিগুড়ির ভাড়াবাড়িতে দিন কাটাতে হবে না। জিএনএলএফ নেতা-কর্মীরা ভোটের পরেও যাতে পাহাড়ে নির্বিঘ্নে রাজনীতি করতে পারেন, তা রাজ্যের শাসক দল নিশ্চিত করতে পারে।
জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিমা লামা বলেন, “বসে থাকলে চলবে না। বাস্তব পরিস্থিতি, সামগ্রিক প্রেক্ষাপট, আগামী দিনে কী হতে পারে, সব মাথায় রেখে পদক্ষেপ করতে হবে। সে কথা আমরা দলের চেয়ারম্যান সুবাস ঘিসিঙ্গকে জানিয়েছি।” ঘিসিঙ্গ দার্জিলিঙে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শীঘ্রই জিএনএলএফ অবস্থান ঘোষণা করবে, আশা নিমার।
তৃণমূলও এই জোটে আগ্রহী। কারণ ঘিসিঙ্গের সঙ্গে হাত মেলালে ভাইচুং-এর ভোট বাড়তে পারে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে জিএনএলএফ পাহাড়ে তিনটি আসনে কার্যত কোনও প্রচার না-চালিয়েই প্রায় ৪২ হাজার ভোট পায়। চলতি বছরে জিএনএলএফ যে ক’টি সভা পাহাড়ে করেছে, তাতে ভিড় হয়েছে ভালই। একটা সময়ে পাহাড়বাসী ঘিসিঙ্গের উপরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে তাঁকে এলাকাছাড়া করলেও, এখন গুরুঙ্গ ও তাঁর অনুগামীদের একাংশের কাজকর্মে ক্ষোভ বাড়ছে। পাহাড়ের বাসিন্দাদের একটা অংশ আবার ঘিসিঙ্গের দিকে ঝুঁকলে তার ফায়দা পাবে তৃণমূলই।
ঘিসিঙ্গ পাহাড়ে ফিরলে জনমত কোন দিকে কতটা হেলবে, তা নিয়ে মোর্চা নেতারাও অনিশ্চিত। জিএনএলএফ-এর সমর্থন পেলে পাহাড়ে প্রচারও সহজ হবে তৃণমূলের। তাই তৃণমূলও এই গাঁটছড়ায় আগ্রহী। বর্তমানে সস্ত্রীক পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “কোনও দল সমর্থন করতে চাইলে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।” জিএনএলএফ-তৃণমূল সমঝোতা হবে কি না সেই প্রশ্নে একান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাই। তবে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “পাহাড়ে সুবাস ঘিসিঙ্গের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তাই আমরা তা নিয়ে খুব ভাবছি না।”