সেবক রোডের ওই আবাসনে চলছে জলসার প্রস্তুতি। — সন্দীপ পাল
বিয়ের প্রীতিভোজের আসরে মুম্বইয়ের শিল্পী এনে আবাসন চত্বরে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে জলসার আয়োজন বন্ধের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দিল একাধিক ছাত্র সংগঠন।
শিলিগুড়ির সেবক রোডের ‘নর্থ সিটি’ আবাসন চত্বরে ওই জলসার জন্য বিশাল মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী পরিবারের উদ্যোগে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ওই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। সে দিনই মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে। ফলে, মাইক, সাউন্ড বক্স প্রকাশ্যে বাজানোয় কলকাতা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কী ভাবে প্রস্তুতি চলছে তা নিয়ে কৌতূহল তুঙ্গে।
আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা পৌঁছেছে পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক রাজনবীর সিংহ কপূর বলেন, ‘‘মাধ্যমিকের সময় প্রকাশ্যে মাইক বাজানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তা সবাইকেই মানতে হবে। না হলে পদক্ষেপ করবে পুলিশ।’’ পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা অবশ্য এ দিনও জানিয়ে দিয়েছেন, মাধ্যমিকের সময় প্রকাশ্যে মাইক বাজানো যাবে না। তিনি বলেন, ‘‘ওই ধরনের অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং কেউ করলে তাতে বাধা দেওয়া হবে।’’
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিক অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্যও বিষয়টি অনুচিত বলে জানিযয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজালে বিষয়টি মহকুমা প্রশাসন এবং পুলিশ কমিশনারের দফতর থেকেই দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে কী হচ্ছে আমরা খোঁজ নেব।’’ মধ্য শিক্ষা পর্ষদের উত্তরবঙ্গের উপ অধিকর্তা প্রদীপ বিশ্বাস মাধ্যমিকের সময়ে মাইক বা বক্স বাজানোর উদ্যোগ দেখে বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘‘মাধ্যমিকের সময় প্রকাশ্যে মাইক বাজানো যাবে না এটা আইন করা আছে। বিষয়টি পর্ষদের তরফে জেলাশাসক, মহকুমা শাসক, বিডিও, পুলিশ কমিশনার সকলকেই জানিয়েছি। তারা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করছি।’’ পুর কর্তৃপক্ষকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
দার্জিলিং জেলা ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিয়োগ জানিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। জেলা ছাত্র পরিষদের সভাপতি রোনাল্ড দে-র অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের নেতাদের একাংশের মদতেই এই ধরনের জলসা চলছে। রবিবারই বিভিন্ন জায়গায় এটা বন্ধের জন্য দরবার করব। প্রয়োজনে অবস্থান, বিক্ষোভ, অবরোধও করা হবে।’’
তাঁরাও এটি সমর্থন করছেন না বলে জানান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দার্জিলিং জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। লোক দেখানো আন্দোলন করে ছাত্রছাত্রীদের আরও অসুবিধা না করে আমরা মন্ত্রী সহ প্রশাসনিক কর্তাদের জানাব।’’
এসএফআইয়ের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এসএফআইয়ের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সৌরভ দাস বলেন, ‘‘জলসার আয়োজকদের অনুরোধ করেছি, তাঁরা যেন মাইক-বক্স না বাজিয়ে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকে অনুষ্ঠান করেন। সেই সঙ্গে পুলিশকেও জানিয়েছি মাধ্যমিকের সময় পরীক্ষার্থীদের কোনও রকম অসুবিধা না হয় তা দেখতে।’’
শিলিগুড়ির অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক সন্দীপন ভট্টাচার্য গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন বলে কিছু আছে মনে হচ্ছে না। না হলে মাধ্যমিকের সময় এ ভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে কী করে? আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি। এমন হলে বিক্ষোভ দেখানো হবে।’’
শিলিগুড়িতে শব্দ দূষণের আশঙ্কার কথা শুনেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নজর রাখছি। মাধ্যমিকের সময়ে প্রকাশ্যে জলসা সত্যিই হলে আয়োজক-সহ যাঁরা জলসায় অংশ নেবেন এবং যে সংস্থা জলসার শব্দ সংযোজনের দায়িত্বে থাকবে, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধেই কলকাতা হাইকোর্টের গ্রিন বেঞ্চে মামলা দায়ের করা হবে।’’ তবে উদ্যোক্তারা তো দাবি করেছেন, আইন মেনেই সব করা হচ্ছে। এমনকী, উদ্যোক্তা পরিবারের এক মুখপাত্র দাবি করেন, তাঁরা প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ অনুমতি প্রার্থনা করবেন।
সুভাষবাবু বলেন, ‘‘হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট কোথাও আবেদন করেই পরীক্ষার সময়ে জলসার অনুমতি জোগাড় করা সম্ভব নয়। উদ্যোক্তারা একমাত্র ভিনগ্রহ থেকে অনুমতি আনতে পারেন।’’ প্রসঙ্গত, গত বছর পুরসভা ভোটের সময়ও নির্বাচন কমিশন পরীক্ষা চলাকালীন মাইক ব্যবহারের শিথিলতার সিদ্ধান্ত নেয়। সুভাষবাবুই গ্রিন বেঞ্চে মামলা করলে শিথিলতা প্রত্যাহার হয়।